একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা – অন্যদিকে মানুষের মধ্যে কোভিডের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে দারুণ অনীহা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন কাগজ খুললেই দেখতে পাবেন যে পুলিশ প্রবল কড়াকড়ি করছে, কিন্তু মানুষ মাস্ক পর ব্যাপারে মোটেই আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কেন এমনটা হচ্ছে?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ব্যাপারটাকে বলে প্যানডেমিক ফ্যাটিগ। এই মানসিক অবস্থায় অতিমারি সংক্রান্ত কোনও নিয়মকানুন মেনে চলার ব্যাপারেই আগ্রহ থাকে না মানুষের – গ্রাস করে বিতৃষ্ণা। ভারতের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটা আরও বেশি করে বোঝা যাচ্ছে, তার কারণ বিদেশের মতো প্রবল সংক্রমণ এখানে হয়নি কোনও অজানা কারণে। তাই বহু মানুষ বুঝতেই পারছেন না যে ব্যাপারটা আদতে কতটা সিরিয়াস।
তার উপরে মারণ গরম পড়তে আরম্ভ করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে সারাক্ষণ থাকাটা কঠিনও বটে। কিন্তু আমাদের দেশে যা জনঘনত্ব, তাতে সাবধান না হয়ে উপায় নেই একেবারেই। গত বছর লকডাউনের ফলে যেভাবে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল, তা বার বার করতে হলে অর্থনীতির হাল আরও খারাপ হবে – সেই মুমূর্ষু অবস্থার আঁচ কিন্তু আপনার-আমার সবার গায়ে লাগবে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাস্ক পরলে কী কী সুবিধে হবে, নিজেকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় তা জানেন ৯৫% বা তার বেশি মানুষ। কিন্তু কার্যত তা পরেন মাত্র ৪৫%। এতটা গা ছাড়া দিলে কিন্তু একেবারেই চলবে না। সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার উপায় একটাই, নিজে সাবধান থাকা এবং সোশাল ডিসট্যান্সিংয়ের নিয়ম মেনে চলা। আপাতত কিছুদিন বেড়াতে যাওয়া, ভিড়ের মধ্যে ঘোরা বন্ধ রাখুন।
অনেকের মনেই দৃঢ় ধারণা জন্মেছে যে কোভিড আর হচ্ছে না মোটেই। যেটুকু যা হইচই হচ্ছে, সেটা নেহাতই বাজার গরম করার জন্য। ভুল ভাবছেন। সমস্ত হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, দরকার পড়লে ফিরিয়ে আনা হবে সেফ হোম। ক্লাস শুরু হওয়ার পরেও সংক্রমণের কারণে একের পর এক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপারটা মোটেই আর ইয়ার্কি-ঠাট্টার পর্যায়ে নেই।
মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার ব্যবহার আর বাইরে থেকে ফিরেই হাত ধুয়ে ফেলার পুরোনো রুটিনে ফিরুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আগামী দু’ মাসে সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে ফের শীর্ষে পৌঁছবে – অঙ্কের হিসেব মানলে তেমনটাই হওয়ার কথা। এর মধ্যে ভ্যাকসিন নেওয়া সম্ভব হলে নিয়ে ফেলুন, তাতে রোগ হলেও খুব একটা বিপদে ফেলবে না। কোনও সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারলে নিজেকে আইসোলেট করুন।
কোভিডের নাম শুনেই তিতিবিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন, এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। নিজেকে মোটিভেট করার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। যুদ্ধে জিততে এখনও অনেকটা সময় লাগবে – এখনই আশা হারাবেন না।