পর্বতারোহণ বা মাউন্টেনিয়ারিং নিয়ে সাধারণত মানুষের দু’রকম রিঅ্যাকশন হয়। একদল ভেবেই পান না, অজস্র টাকা খরচ করে, প্রাণ হাতে নিয়ে পাহাড়ে চড়তে যাওয়ার দরকারটা কি? বিশেষত যেখানে মাউন্টেনিয়ারিংকে স্পোর্টস হিসেবে তেমন মান্যতা দেওয়া হয় না, একজন স্পনসর খুঁজে বের করতে গিয়ে নাকাল হন নামী পর্বতারোহীরা, ওই উচ্চতায় সামান্য শ্বাস নিতে গিয়ে বুক ফেটে যাওয়ার মতো কষ্ট হয়?
আর যাঁদের একবার পাহাড়ে চড়ার নেশায় পায়, তাঁরা কিছুতেই সেই টান কাটিয়ে বেরোতে পারেন না। তাঁদেরই একজন হলেন রুদ্রপ্রসাদ হালদার। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এই চাকুরে ২০১৬ সালে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে চেপেছেন, কাঞ্চঞ্জনঘা জয় করতে গিয়ে হারিয়েছেন হাতের তিনটি আঙুল। তার পরেও দমে যাননি। আপনি এই লেখা যখন পড়ছেন, তিনি তখন বন্ধুবর রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর সঙ্গে হাঁটা দিয়েছেন হিমাচলপ্রদেশের দেও টিব্বা শৃঙ্গজয়ের উদ্দেশে।
বলে দেওয়া ভালো যে, দেও টিব্বা হচ্ছে পির পাঞ্জাল রেঞ্জের একটি পাহাড়, উচ্চতা ৬০০০ মিটার মতো। স্থানীয় উপকথা অনুসারে, পাহাড়ের মাথায় হচ্ছে দেবতাদের বাড়ি, তাই এই নাম। মাথার উপর বরফের মুকুট পরা দেও টিব্বা এমনিতে বেশ নিরীহগোছের দেখতে। চূড়া থেকে যে ঢাল নেমেছে, সেগুলো অবশ্য খুব খাড়া, কিছু কিছু আইস ক্লিফ আছে, যাকে পর্বতারোহীদের ভাষায় ‘আনস্টেবল’ বলা যেতে পারে।
শীতকালে এই পাহাড়ে চড়াটা নিশ্চিতভাবেই আরও কঠিন হয়ে যায়। এ সময়ে পশ্চিমি ঝঞ্ঝার কারণে ঝড়বৃষ্টি হয় গোটা উত্তর ভারতেই, যখন তখন বদলে যায় আবহাওয়া। খারাপ আবহাওয়া এই অভিযাত্রীদলের এবারেও সঙ্গী হয়েছে, পিছিয়ে গিয়েছে বেস ক্যাম্প থেকে রওনা হওয়ার দিন। তেমন হলে ঘুরপথে অনেকটা বাড়তি রাস্তা গিয়ে তবে বেস ক্যাম্পে পৌঁছতে হবে।
আরও একটা চিন্তার বিষয় হচ্ছে, শীতকালে যেহেতু পাহাড়ে তুষারপাত হয়, তাই বরফ জমাট বাঁধার সময় পায় না। আর ঝুরো বরফের কারণে বিরাট বিপর্যয় হতে পারে – তা বাড়ায় তুষারধসের আশঙ্কাও। ঝুরো বরফের খুব ছোটো আকারের ধস, যার পারিভাষিক নাম ‘স্লাফ’—পর্বতারোহীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।
বিখ্যাত পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত, যাঁর ঝুলিতে ‘সেভেন সামিট’ ও ‘সেভেন ভলক্যানিক সামিট’ জয় করার বিরল কৃতিত্ব রয়েছে, মনে করেন যে পর্বতারোহণের মরশুমে নাগ টিব্বা শৃঙ্গ জয় সহজ হলেও শীতকালে তা দুরূহ হয়ে উঠতে পারে। শীতের দিনে এমনিতেও ভারতে খুব একটা অভিযান হয় না, হলেও সাফল্যের সংখ্যা হাতে গোনা। তাই রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তী দেও টিব্বা জয় করে ফিরে এলে নিঃসন্দেহে বিরল কৃতিত্বের অধিকারী হবেন!