এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে যেটা আমাদের বুঝতে হবে, তা হল কোভিড একেবারেই নতুন একটা অসুখ এবং তার সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। রোজ নতুন আবিষ্কার হচ্ছে এবং পুরোনো ধারণা বাতিল হয়ে যাচ্ছে – তাই কোনও ধারণাকেই ধ্রুব ভেবে নেওয়ার কারণ নেই।
কোভিড থেকে সেরে ওঠার কয়েকমাসের মধ্যে ফের রি-ইনফেকশন হয়েছে, এমন রোগীর দেখা মিলেছে, তবে তার সংখ্যা কম। প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল যে একবার আপনার শরীর এই ভাইরাসকে চিনে ফেললে তার বিরুদ্ধে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে – এখনও পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়নি। হংকংয়ের এক বাসিন্দা সেরে ওঠার চারমাসের মাথায় ফের করোনা পজিটিভ হন — দ্বিতীয়বার কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দৃষ্টান্ত এটাই, তার পর চিনেও এমন অনেকের খোঁজ মেলে।
প্রশ্ন ওঠে, একবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরেও কীভাবে আবার সংক্রমণ হচ্ছে? আক্রান্তদের পরীক্ষার পর দেখা যায় যে প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই একেবারে পৃথক একটি স্ট্রেনের ভাইরাস দ্বিতীয় সংক্রমণের জন্য দায়ী। তবে শরীরে অ্যান্টিবডি একবার তৈরি হয়ে গেছে বলেই সংক্রমণ খুব ভয়াবহ হয়নি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামান্য উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।
ইদানীং এ দেশেও সেকেন্ড ওয়েভ শুরুর পর থেকে এমন রোগীর দেখা মিলছে যাঁরা একবার করোনার গ্রাস থেকে মুক্ত হওয়ার পর ফের পজিটিভ হয়েছেন। কিছু ডাক্তার এক্ষেত্রে আঙুল তুলছেন RT-PCR পদ্ধতির দিকে। ভারতের ৭০ শতাংশ বা তার বেশি কোভিড পরীক্ষা হয় এই কিটে এবং ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে যে পরীক্ষার ফলে গলতি থাকতে পারে, তা মেনেই নেওয়া হয়। এই পরীক্ষা জীবিত আর মৃত ভাইরাসের ফারাক ধরতে পারে না। ফলে অনেকের ফলস নেগেটিভ হয়।
সেই মতের উপরে ভিত্তি করেই অনেকে বলছেন যে খুব ঘন ঘন দু’বার সংক্রমণের কারণ আদৌ নতুন ইনফেকশন নয়, সম্ভবত আগেরবার ইনফেকশনই রি-ল্যাপ্স করেছে। রোগী পুরোপুরিভাবে সংক্রমণ থেকে মুক্ত হননি। এমনিতেও কোভিড চট করে পিছু ছাড়ছে না অনেকেরই, লং কোভিডের নানা লক্ষণ থেকে যাচ্ছে বেশ কয়েক মাস। এঁদের রি-ইনফেকটেড হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও অনেকেরই এভাবে সংক্রমণ হচ্ছে। তবে দুটো ডোজ হয়ে গেলে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায় বলে সংক্রমণ খুব ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। দেখা গিয়েছে যে যাঁরা প্রথম সংক্রমণের পর ভালো রকম ঘায়েল হয়েছিলেন তাঁদেরই সবচেয়ে শক্তিশালী ইমিউন রেসপন্স তৈরি হচ্ছে।
মনে রাখবেন, একবার সংক্রমণ হওয়ার পরেও কিন্তু নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনও কারণ নেই। মাস্ক পরা, হাত ধোওয়ার মতো কোভিড প্রোটোকল মানতেই হবে। পরে কখনও সংক্রমিত হলে হয়তো আপনি সেভাবে ঘায়েল হবেন না, কিন্তু সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন। তাই সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও খুব সতর্ক থাকুন।