ক্রিস্টোফার নোলানের নাম শুনলে ছায়াছবির দর্শকদের মধ্যে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় সাধারণত। একদল নোলানের ছবি বলতে অজ্ঞান, অন্যদল মনে করেন এই ৫০ বছর বয়সি পরিচালকের ছবি দেখে মাথা ফুরফুরে হওয়ার বদলে ভারী হয়ে যায়। আপনি যদি প্রথম দলের হন, তা হলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে নড়ে-চড়ে বসেছেন? যাঁরা দ্বিতীয় দলে, তাঁরাও কিন্তু নোলানের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটিকে এড়িয়ে যেতে পারবেন না।
প্রথমে ঠিক ছিল ‘টেনেট’ মুক্তি পাবে জুলাই মাসে। জুলাই যতদিনে এল, ততদিনে আমাদের জীবনে একটাই সত্য – লকডাউন। সিনেমা হল কবে খুলবে ঠিক নেই, খুললেও হলে গিয়ে ছবি দেখার রিস্ক কে নেবে? বড়ো বড়ো সব প্রোডাকশন হাউস আর পরিচালকেরা যখন মাথার চুল ছিঁড়ছেন সমাধান বের করার জন্য, একের পর এক ছবি দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে, তখনও নোলান অটল। জেদ ধরে বসে রইলেন যে তাঁর ছবি বড়ো পর্দার কথা ভেবে তৈরি, সেখানেই মুক্তিও পাবে। তাতে রোজগারপাতি খানিক কম হলেও অসুবিধে নেই।
সারা দুনিয়ায় সিনেমা হল খুলল একটা সময়ে, অজস্র নিয়ম মেনে ছবি দেখতে যাওয়ার ছাড়পত্রও মিলল। মুক্তি পেল ‘টেনেট’। চিন আর আমেরিকার বিরাট বাজারে মুক্তি পাওয়ার আগেই বাকি পৃথিবী থেকে ৫৩ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে ফেলল এই ছবি! নোলান তাঁর ইনস্টাগ্রাম পেজে জানালেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ মিলিয়ন মতো ব্যবসা হলেই তাঁর ইউনিট লাভের মুখ দেখত – বাকিটা দর্শকের আশীর্বাদ!
কী আছে ‘টেনেট’-এ যা মানুষকে ঝুঁকি নিয়েও সিনেমা হলে যেতে বাধ্য করছে? এবং বহু দর্শক ফিরে ফিরে আসছেন হলে? এখানে অবশ্য নোলান ভক্তরা সুর চড়াবেন – এই নির্মাতার বেশিরভাগ ছবিই রিপিট দর্শক পায়। প্রথমবার দেখার পর এত প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসতে থাকে যে দ্বিতীয়বার ফের দেখতে হয়। তার পর আবার টেলিভিশনে দেখালেও চোখ সরানো যায় না। কিন্তু এখন তো সিনেমা দেখার অভ্যেসটাই বদলে গিয়েছে – বাড়ির আরামে, নিজের ফোনে বসেই আশ মিটিয়ে ছবি দেখা যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও বড়ো পর্দায় যাবেন কিসের টানে?
প্রথম আকর্ষণ প্লট। এ ছবির কেন্দ্রে আছে সময়। ২০০০ সালের ‘মেমেন্টো’ ছবি থেকে সময় নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন নোলান। ‘ইনসেপশন’, ‘ইন্টারস্টেলার’ বা ‘ডানকার্ক’-এও টাইম আর ডাইমেনশন সম্পর্কিত ধারণাগুলিকে নানা ভাঙচুরের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়েছেন পরিচালক। সময় যদি কোনও মুহূর্তে পিছন দিকে দৌড়তে আরম্ভ করে, তা হলে কি পিছনে গিয়ে নিজের ভুল শুধরে ফের বর্তমানে ফিরে আসতে পারে মানুষ? যেতে পারে ভবিষ্যতে? এই মূল বিষয়ের উপর ভর দিয়ে তৈরি হয়েছে টানটান স্পাই থ্রিলার। তার মজাটা বড়ো পর্দাতেই ভালো লাগবে।
অনেকেই বলেছেন, ছবিটি দেখে তাঁরা সবটা বোঝেননি। নোলান নিজেও জানেন যে তাঁর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ বার বার ওঠে। জবাবে তিনি বলেছেন – সব সময় বোঝাটাই জরুরি নয়, একটা ছবির চরিত্রগুলোর সঙ্গে দর্শকের জার্নিটাও গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক থেকে দেখলে ‘টেনেট’ নিরাশ করবে না কাউকেই।
এ ছবিতে ডিম্পল কাপাডিয়া অভিনয় করেছেন ছোটো একটি চরিত্রে, পটভূমি হিসেবে রয়েছে মুম্বইও। আছেন জন ডেভিড ওয়াশিংটন আর রবার্ট প্যাটিনসনের মতো অভিনেতাও। কিন্তু তাঁদের কারও ক্যারিসমাই আর আলাদা করে চোখে পড়ে না – পরিচালক হিসেবে এটাই কি কম সাফল্য?
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম