২০১৭ সালের পর থেকে রক ব্যান্ড ‘কোল্ডপ্লে’ বন্ধ রেখেছিল লাইভ কনসার্ট। কারণ? কারণ পরিবেশ দূষণ। একটা লাইভ কনসার্টে বহু দর্শক আসেন, বিরাট জায়গা জুড়ে আসর বসে। আলো, আওয়াজে গমগম করে চারিপাশ। প্রচুর যন্ত্রপাতির ব্যবহার হয় – ফলে পরিবেশে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে। এমনিতেই পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিদিন বাড়ছে, তার উপর আবার তাঁদের কনসার্টের কারণে সমস্যা বাড়াতে রাজি ছিলেন না এই ব্যান্ডের সদস্যরা।
অতি সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যান্ডের লিড গায়ক ক্রিস মার্টিন জানিয়েছেন তাঁরা ফের কনসার্ট শুরু করছেন। কিন্তু পরিবেশ বাঁচানোর কী হবে? ক্রিসের বক্তব্য, “দেখুন, আমরা এমন একটা উপায় খুঁজে বের করেছি যাতে আমাদের লক্ষ্যের ৫০% ছোঁওয়া সম্ভব। এখন যে সব অনুষ্ঠান আমরা করব, তাতেও কার্বন এমিশন হবে, তবে তার মাত্রা অনেকটাই কম। আমাদের রিসার্চ চলছে, আগামীদিনে আরও উন্নত পদ্ধতির সন্ধান পাবো বলে আশা করি।”
কী করছে কোল্ডপ্লে? প্রথমত, তারা সাস্টেনেবল ও রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে যে সব সংস্থা কাজ করে, তাদের আর্থিক সাহায্য জোগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে যত নতুন আবিষ্কার হবে, তত নিজেদের লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগোতে পারবে তারা।
দুই, যতগুলি টিকিট বিক্রি হবে, ততগুলি গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘কোল্ডপ্লে’। তাতে পৃথিবীতে খানিকটা সবুজ ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব।
তিন, পুরো কনসার্টে প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের জোগান আসবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে। রেস্তোরাঁশিল্পে ভাজাভুজির পর বিপুল পরিমাণ রান্নার তেল বাতিল হয় প্রতিদিন, সোলার পাওয়ারের সঙ্গে এই তেল কাজে লাগিয়েও তাঁরা স্টেডিয়ামে আলো জ্বালাচ্ছেন।
চার, দর্শকদের জন্য একটা কাইনেটিক ডান্স ফ্লোর তৈরি করা হবে। সেখানে তাঁরা যত বেশি লাফঝাঁপ করবেন, তত বেশি এনার্জি তৈরি হবে – তা দিয়েই আলো জ্বলবে মঞ্চে। পাশাপাশি কাজে লাগানো হচ্ছে গাড়ির ব্যাটারি। তাঁরা যে রিস্ট ব্যান্ড বা গ্যাজেটস ব্যবহার করছেন, সেগুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের তৈরি।
পাঁচ, স্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য পরিশ্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকছে। দর্শকদের নিজেদের বোতল ভরে নিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে – বার বার জলের বোতল কেনার অর্থ বেশি প্লাস্টিক ব্যবহার করা।
View this post on Instagram
ক্রিস স্বীকার করে নিয়েছেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা কার্বন নির্গমন ঠেকাতে পারছেন না এখনও। যেমন, ব্যান্ডের সদস্যরা যাতায়াতের জন্য এখনও চার্টার্ড ফ্লাইট ব্যবহার করেন – এই বিষয়টি নিয়ে বহু সমালোচনা হয়, কিন্তু তাঁরা কম সময়ে ও সহজে এক ভেনু থেকে অন্যত্র যেতে পারেন, এটাও ঠিক। যত মানুষ কনসার্টে আসবেন, তাঁদের যাতায়াতের কারণেও পরিবেশ দূষণ হবে। কিন্তু এগুলো বাদ দিয়েও এমন নানা বিষয় আছে যেখানে কার্বন নির্গমন কমানো সম্ভব।
পৃথিবীর অবস্থা সত্যিই খুব খারাপ। আমরা যে যতটুকু পারি, ততটা নিয়ে এগিয়ে না এলে কার্বন নির্গমন কমানো অসম্ভব। তাই ‘কোল্ডপ্লে’ এই উদ্যোগকে স্বাগত না জানিয়ে উপায় নেই!