এ কথা একেবারে সঠিক যে বাংলায় করোনা সংক্রমণের সাম্প্রতিক হার নিম্নগামী। মৃত্যুর সংখ্যাও হাতে-গোনা। ফলে রাস্তায়-ঘাটে ভিড় বাড়ছে ক্রমশ, সেই সঙ্গে বাড়ছে অসুখ হালকাভাবে নেওয়ার প্রবণতাও। আর এই পরিস্থিতিই ডাক্তার ও বিজ্ঞানীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।
যে কোনও মহামারি বা অতিমারি একটা নিয়ম মেনে চলে। সংক্রমণ বাড়ে হু হু করে, তার পর কমে যায় নিজের নিয়মে – ততদিন জনগোষ্ঠীর বহু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে গিয়েছে এবং গড়ে উঠেছে হার্ড ইমিউনিটি। নতুন কোনও ‘হোস্ট’ না পেয়ে ভাইরাস কার্যকারিতা হারায়।
পশ্চিমবঙ্গে এখন ঠিক এই অবস্থাই চলছে – আর রাস্তায় বেরোলেই সেটা বোঝা যাচ্ছে। মাস্কের বালাই নেই, যে কোনও পুজো-পার্বণ, বিয়েবাড়িতে আগের মতোই ভিড় জমছে। মাস্কের বালাই নেই, স্যানিটাইজেশন শিকেয়। সামনে হোলি, নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছে – জনসভা, প্রচারসভা চলতেই থাকবে। আর সেই ফাঁকেই মারণ শক্তি নিয়ে এসে হাজির হবে সংক্রমণের পরের স্রোত। ঠিক যেমনটা কেরল, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকে হচ্ছে। এমন ওয়েভ আরও আসতে পারে ভবিষ্যতেও।
ভাইরাস কিন্তু টিকে থাকার লড়াই চালিয়েই যাচ্ছে, তাই একের পর এক মিউটেশন আর নয়া স্ট্রেনের খবরও মিলছে। এর যে কোনওটা আগের স্ট্রেনের থেকে ভয়াবহ বলে প্রমাণিত হতেই পারে। টীকাকরণ সম্পূর্ণ হতে এখনও অনেকটাই সময় লাগবে। আর এই পরিস্থিতিতে বাঁচার রাস্তা একটাই – আপনাকে সাবধানে থাকতে হবে, এড়িয়ে চলতে হবে ভিড়। যে সব সারফেসে অজস্র মানুষের ছোঁয়া লেগেছে, তা এড়িয়ে চলতে পারলেই ভালো হয়।
বয়স্ক মানুষ বা যাঁরা নানা কো-মর্বিডিটিতে ভুগছেন, তাঁরা এখনও বাড়ির বাইরে বেরনোর আগে সাবধান হোন। একান্ত দরকার না পড়লে বেরোবেন না, আমোদ-আহ্লাদে মেতে ওঠার সময় এখনও আসেনি। যেমন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন এতদিন, সেটাই চালিয়ে যান।
ভ্যাকসিন নিয়ে নিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। রোগের সংক্রমণ হয়তো ভ্যাক্সিন কমাতে পারবে না, কিন্তু তার তীব্রতা নিশ্চিতভাবেই কমিয়ে দেবে। প্রতিটি বরোতে সরকারি ও বেসরকারি কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের নাম নথিভুক্ত করান সেখানে। অনেকেই টীকা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছেন এখনও – তার গুণমানের বিচার করছেন। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার হাতের কাছে যেটি মিলছে, সেই টীকাই এই মুহূর্তে আপনাকে রক্ষা করবে।
বাইরে বেরোলে মাস্ক পরতেই হবে। আগের মতোই সচেতন হয়ে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। জ্বর, গায়ে ব্যথা হলে নিজেকে আলাদা করে নিন এখনই। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চিকিৎসা করুন। আসন্ন দোল উৎসবে লাগামছাড়া আনন্দে মেতে উঠবেন না। আপাতত এই কয়েকটি সতর্কতাই আপনাকে সুস্থ রাখবে।