যে কোনও ভাইরাসই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলায়, তা না হলে টিকে থাকা আর বংশবিস্তার করা সম্ভব না। ঠিক সেটাই হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও। যে স্পাইক প্রোটিনকে কমজোরি করে দেওয়ার জন্য আমরা বার বার হাত ধুচ্ছি আর স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি, সেই প্রোটিনকেই আরও কার্যকর করে তোলার জন্য ভাইরাসও নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। পরিবর্তনের অনেকটাই হচ্ছে স্থানীয়ভাবে।
করোনা ভাইরাসের এমন হাজারো ভ্যারিয়ান্ট আছে। এক বছর আগে যেটি রোগ ছড়িয়েছিল, তার থেকে সেগুলি কোনও না কোনওভাবে বদলে ফেলেছে নিজেকে। তারই একটি, যাকে বলা হচ্ছে ব্রিটেন স্ট্রেন — ইংল্যান্ডে সেকেন্ড ওয়েভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্রাজিল স্ট্রেনের কারণে ভয়াবহ অবস্থা দেখা দিয়েছে মানাউস শহরে।
সেখানে ভাইরাসের আক্রমণ শুরু হয় মার্চের ১৩ তারিখে, সে মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসে যায় সংক্রমণ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল, সোশাল ডিসট্যান্সিং নর্ম শিথিল হওয়ার পরেও রোগের প্রকোপ কমার কারণ একটাই, বাসিন্দাদের শরীরে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গিয়েছে।
২০২১-এর জানুয়ারি থেকে ফের সংক্রমণ মাথাচাড়া দিতে আরম্ভ করে মানাউসে। ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১০ জানুয়ারি কবর দেওয়া হয়েছিল ১৪৪টি মৃতদেহ। ১১ তারিখ ১৫০, ১২ তারিখ ১৬৬, ১৩ তারিখ ১৯৮। কোভিডহীন বছরে মানাউসে রোজ মেরেকেটে ৩০টি দেহ সমাধিস্থ করা হত। শহরে অক্সিজেনের চূড়ান্ত আকাল চলছে। বাড়িতে অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছেন অনেক অসুস্থ মানুষ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যে স্ট্রেনটি দাপট দেখাচ্ছে, সেটি আবার ব্রিটেন বা ব্রাজিল স্ট্রেনের চেয়ে আলাদা। ব্রিটেন স্ট্রেন ছড়াচ্ছে দ্রুত, কিন্তু যাঁদের একবার হয়ে গিয়েছে বা যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাঁদের রেহাই দিচ্ছে। ব্রাজিল স্ট্রেন অনেক বেশি সিরিয়াস, বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্রেনের স্পাইক প্রোটিনে এমন কিছু পরিবর্তন হয়েছে যা বিশেষজ্ঞদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। যাঁরা আগেরবার অ্যাসিম্পটোম্যাটিক ছিলেন বা মৃদু ইনফেকশন হয়েছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে ভয়াবহ সংক্রমণ হয়েছে, অ্যান্টিবডি তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। হংকংয়ের কিছু এলাকাতেও রোগ ছড়াচ্ছে দ্রুত, হয়তো সেখানে ফের লকডাউন হতে পারে। আমেরিকায় এমন রোগী পাওয়া যাচ্ছে যাঁরা দ্বিতীয়বার সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।
ভারতেও কিন্তু যে কোনওদিন সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হতে পারে এবং ভ্যাকসিন তার বিরুদ্ধে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। একবার রোগ হয়ে যাওয়ার পরেও যদি না অ্যান্টিবডি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে, তা হলে ভ্যাকসিন কতটা সফলভাবে রোগ ঠেকাবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তবে গবেষণা চলছে, বিশেষজ্ঞরা মতের আদানপ্রদান করছেন, আশা করা যায় সমাধানও একটা বেরোবে।
ততদিন অবশ্য আমাদেরও খুব সাবধানে থাকতে হবে। এখনই সোশাল ডিস্ট্যানসিং ভুললে চলবে না। বাইরে থেকে এসেই পা ধুয়ে নিন ভালো করে, জুতো বাইরে রাখুন। জামাকাপড় কেচে ফেলুন। ভিড় এড়িয়ে চলুন, কোনও সারফেসে হাত দেবেন না। অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া, খাওয়াদাওয়ার দরকার নেই। মাস্কের ব্যবহার এ বছরটা পুরোই চলবে। নিয়মমাফিক মাস্ক ব্যবহার করুন।