হ্যাঁ, এ কথা একেবারে ১০০ ভাগ সত্যি যে কোভিড এসে আমাদের চেনা দুনিয়াটাকে একেবারে ওলটপালট করে দিয়েছে। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, অসীম কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন বা এখনও যাচ্ছেন, চাকরি খুইয়েছেন – এসব সত্যি।
কিন্তু পাশাপাশি আমাদের পাওয়ার খাতাও ভরে উঠেছে – সেদিকটা নিয়ে কেউ ভাবি না! আসলে মানুশের স্বভাবটাই এমন। যা হাতের মুঠোয় আছে, তাতে আমাদের আশ মেটে না কখনওই। না হলে জীবনে গত দেড় বছরে আমরা কী পেয়েছি তা ভুলে যেতে পারতাম না!
কোভিড, লকডাউন, দিনের পর দিন বাড়ির ঘেরাটোপে আটকে থাকা আমাদের সবাইকেই এক ধরনের মুক্তির আস্বাদ দিয়েছে। কীভাবে জানতে চান?
১. ৯টা-৫টার দাসত্ব থেকে মুক্তি
অনেকেই কাজ হারিয়ে খুব বিপদে পড়েছেন। আবার অনেকেই চাকরির দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। হ্যাঁ, আর্থিক টানাটানি আছে সবারই – কিন্তু তার মধ্যেও ভালো থাকার কায়দাটাও তো রপ্ত হয়ে গিয়েছে মোটামুটি, তাই না?
চাকরি যাওয়ার পর অনেকেই গোড়ায় ভেঙে পড়েছিলেন, কিন্তু তার পর ফের পিঠ সোজা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজের নিজের মতো করে বাঁচার রাস্তা খুঁজে বের করছেন। চাকরি একটা নিশ্চিন্ত জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়, ঠিক কথা। কিন্তু ইচ্ছে থাকুক বা না থাকুক, লাগাতার বছরের পর বছর একই কাজ করে যাওয়ার মধ্যে একটা ক্লান্তিবোধও থাকে। তাই অনেকেই নিজের ইচ্ছে আর পছন্দমতো একটা রাস্তা বের করে নিয়েছেন। হ্যাঁ, রোজগার হয়তো খানিক কমই হচ্ছে, কিন্তু স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার মজাই আলাদা!
২. বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যেই দুনিয়া
আগে বাড়িতে থাকতেন কতক্ষণ? আপনার জানলার কোনাকুনি যে বট গাছ আছে, তাতে টিয়াপাখির বাসা আছে, তা লকডাউন না হলে জানতে পারতেন? বাড়ির লোকগুলোর সঙ্গে বেশি সময় কাটালে, কথা বললে, কাছাকাছি থাকলে অনেক ছোটো ছোটো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তা কি বুঝতে পারছেন? অনেকেই বাড়ি সাজিয়েছেন সুন্দর করে, ঘর রং করেছেন, গাছপালা লাগিয়েছেন, বাড়ির সদস্যদের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন নতুন বন্ধু। সেটাই কি কম?
৩. কনজিউমারিজমের নাগপাশ থেকে মুক্তি
কোনও কিছু খেতে ইচ্ছে হলেই হোটেল বা রেস্তোরাঁয় চলে যেতেন আগে, তাতে খরচও হত বেশি। এখন কি করেন? আগে চেষ্টা করেন কাছাকাছি কিছু একটা বানিয়ে নিতে, তাই না?
প্রতি সপ্তাহে একবার শপিং করতে না পারলে মন খারাপ হত যাঁদের, তাঁরাও আজকাল মাসের পর মাস কিছু কেনেন না। কিনে হবেটাই বা কি? পরে যাবেন কোথায়?
সারাক্ষণ যে সব বিলাসবহুল জিনিসপত্রের বিজ্ঞাপন চোখে পড়ত, মনে হত যে এমনটি হাতের মুঠোয় না আনতে পারলে জীবন বৃথা – তার কোনওটাই আজকাল আর তেমন কাজের বলে মনে হয় না।
এর কারণ একটাই, আমরা বুঝে গিয়েছি যে খুব কম খরচ হয় বেঁচে থাকতে। উদবৃত্ত টাকাটা জমিয়ে রাখলে কঠিন সময়টা পার করা সহজ হয়। তাই যা প্রয়োজন নেই, তার পিছনে খরচ বাড়ানোর দরকারও নেই।
৪. সেজেগুজে তৈরি হয়ে বাইরে যাওয়ার গল্প নেই
শেষ কয়েকমাসে সাজগোজ করে নির্দিষ্ট টাইমে অফিসে বেরোতে হয়নি। একান্ত কাছের বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যা আড্ডা হয়েছে, তাও বাড়িতেই। তাতে আর কে কবে সেজেগুজে বেরোয়? বহু মেয়ে তাঁদের সোশাল মিডিয়ার পাতায় স্বীকার করে নিয়েছেন যে গত দেড় বছরে তাঁদের বডি কনফিডেন্স অনেকটাই বেড়েছে। পুশ-আপ ব্রা আর হাই হিল দিয়ে নিজেদের খামতিগুলিকে না ঢাকার অভ্যেসটা আগামী দিনেও রয়ে গেলে পরিবর্তন আসা অবশ্যম্ভাবী!
৫. সময় আপনার হাতের মুঠোয়!
বাড়িতে বসে কাজ করার সুবিধে হচ্ছে, তা আপনি নিজের ইচ্ছেমতো যখন খুশি করতে পারবেন! হ্যাঁ, অনেকেই তা নিয়ে অভিযোগ করছেন – তবে সময়ে কাজ শেষ করে ফেললে খুব একটা অসুবিধে হওয়ার কথা নয় কিন্তু!