গত কয়েকদিন ধরে মূলত সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছিল একটি পোস্ট – ফরাসি ভাইরোলজিস্ট ও নোবেলজয়ী লু মন্টেনিয়া একটি আমেরিকান পোর্টালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, গণ-টিকাকরণ পদ্ধতি হচ্ছে কোভিড চিকিৎসার সব চেয়ে মারাত্মক ভুল।
এর দরুন প্রাপকের শরীরে যে অ্যান্টিবডি গড়ে উঠবে তার কারণে বছর দুয়েকের মধ্যেই তার মৃত্যু অনিবার্য। এ রোগের কোনও চিকিৎসাও করা যাবে না। তার চাইতে বড়ো সমস্যা হচ্ছে, টিকা প্রয়োগ করার ফলে ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হবে, তারা দিনে দিনে আরও মারাত্মক হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন যে, আগামী দিনের ইতিহাস বইগুলি সাক্ষী দেবে যে সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তার চাইতে অনেক বেশি সংখ্যক প্রাণ কেড়েছে চটজলদি তৈরি হওয়া টিকা। গোটা পৃথিবীর সব ভাইরোলজিস্ট নাকি এ সত্যি জেনেও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন।
পড়েই বেশ গা ছমছমে অনুভূতি হচ্ছে তো? ঠিক যেন হলিউডের অ্যাপোক্যালিপটিক ছবির স্ক্রিপ্ট! এমনিতেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে টিকা দেওয়া নিয়ে মানুষের মনে বিচিত্র সব সংশয় আছে, তার পর যদি এমন কঠিন ভবিষ্যদ্বাণী কানে যায়, তা হলে টিকাকরণ প্রকল্প চালিয়ে যাওয়াই মুশকিল! ফলে এই সব দেশে নানা ভ্যারিয়ান্ট তৈরি করবে ভাইরাস – তার ফলে কোভিডের হাত থেকে মুক্তি পেতে আরও সময় লাগবে।
তাই বিশ্বের নানা সংস্থা, বিশেষ করে যারা ফেক নিউজ নিয়ে কাজ করে, সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অচিরেই প্রমাণিত হয় যে খবরটি ভুয়ো। তা ছাড়া লু মন্টেনিয়াকে নিয়েই চিকিৎসাবিজ্ঞানী মহলে নানা বিতর্ক আছে। এই ফরাসি বিজ্ঞানীর মূল গবেষণা ছিল এইচআইভি ভাইরাস নিয়ে এবং তিনি বরাবর জোর গলায় বলে এসেছেন যে করোনা ভাইরাস চিনদেশের একটি পরীক্ষাগারে তৈরি। এ দাবির সপক্ষে এখনও কোনও তথ্যপ্রমাণ অবশ্য তিনি দাখিল করতে পারেননি।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে যারা কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের নিয়ে এখন গবেষণা করছেন লু। তাঁর বক্তব্য, এদের শরীরে এমন ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হয়েছে যা ভ্যাকসিনে বাগ মানছে না। এর মধ্যে নতুন কোনও বক্তব্য নেই – সবাই জানেন যে হালে যে সব ভ্যারিয়ান্ট তৈরি হয়েছে সেগুলি এই ভ্যাকসিনকে পরাস্ত করতে সক্ষম, তবে এর ফলে রোগের তীব্রতা বাড়ছে না।
লু মনে করেন এই টিকাকরণ পদ্ধতির কোনও কার্যকারিতা নেই – চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এর চাইতে বড়ো ভুল সিদ্ধান্ত খুব কম দেখা গিয়েছে। কিন্তু তিনি গোটা সাক্ষাৎকারে একবারও বলেননি যে যারা টিকা নিয়েছে, তারা সবাই দু’ বছরের মধ্যেই মারা যাবে – এই বক্তব্যটাই মিথ্যে।
তাই ঘাবড়াবেন না, অসাধু উদ্দেশ্যে ছড়ানো খবরে বিশেষ কান দেওয়ারও দরকার নেই! ডাক্তাররা বার বার বলছেন, টিকা নেওয়ার পর কোভিড সংক্রমণ মারাত্মক হয়ে দাঁড়াচ্ছে না – তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবারের সবার টিকাকরণ সুনিশ্চিত করুন।