৯ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম খোঁজ মেলে কোভিডের নয়া ভ্যারিয়ান্ট B.1.1.529-এর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, তার পর থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকায় কোভিড রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের প্রভাবেই বেশি সংক্রমণ হচ্ছিল, কিন্তু এবারে রোগীর সংখ্যা বাড়ার পিছনে এই নয়া ভ্যারিয়ান্টের ভূমিকা বেশি।
নতুন এই ভ্যারিয়ান্টের নাম রাখা হয়েছে ‘ওমেক্রন’। WHO এই নতুন স্ট্রেনটিকে ‘Varient of concern’ আখ্যা দিয়েছে। কেন এমন বলা হচ্ছে? কারণ এই নতুন স্ট্রেনটি অজস্র মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। সম্ভবত এইচআইভি পজিটিভ কোনও রোগীর শরীরে সংক্রমণ হওয়ার পরও তিনি দীর্ঘদিন বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিলেন – সেই অবস্থায় তাঁর শরীরে অন্তত ৫০টি মিউটেশন হয়েছে করোনা ভাইরাসের।
এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক? বোঝা যাচ্ছে না এখনও। মোট যতগুলি মিউটেশন হয়েছে, তার ৩০টি হয়েছে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের সাহায্যের টিকা মানুষের শরীরে ঢোকে এবং যে ক’টি ভ্যাকসিন বাজারে মিলছে, তার বেশিরভাগেরই কাজ হচ্ছে স্পাইক প্রোটিনের সংক্রমণ ক্ষমতা ধ্বংস করা। এখনও বোঝা যাচ্ছে না এই মিউটেশনের ফলে ভাইরাস কতটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে – আরও কিছুদিন সতর্কভাবে নজর রাখতে হবে সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির উপর।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হংকংয়ে ফেরা দুই যাত্রীর শরীরে এই ওমেক্রন ভ্যারিয়ান্টের সন্ধান মিলেছে, তাঁদের কড়া কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ব্রিটেন, আমেরিকা, ইতালি, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো কিছু দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা কোনও যাত্রীকে দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। ভারত এখনও নিষেধাজ্ঞা জারি না করলেও সে দেশ থেকে ফেরত আসা সব যাত্রীকে কড়াভাবে স্ক্রিনিং করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনই আতঙ্কিত না হয়ে নন-ফার্মাসিউটিকাল ইন্টারভেনশন মেনে চলার উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে। জমায়েত এড়িয়ে চলুন, মাস্ক পরুন – অনেকে আলগা মাস্ক পরে পাবলিক প্লেসে যাচ্ছেন, সেটাও বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। হাত ধুন, স্যানিটাইজ করুন। যদি কখনও জ্বর বা কাশির মতো উপসর্গ দেখেন, তা হলে আইসোলেশনে যান, কোভিড পরীক্ষা করান। দক্ষিণ আফ্রিকায় উদ্ভূত বিটা স্ট্রেন কিন্তু তেমন প্রভাব ফেলেনি, তাই ওমেক্রন নিয়ে এখন থেকে চিন্তা করার কিছু নেই।
ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে রোগ হয়তো তীব্র আকার ধারণ করবে না, কিন্তু ভাইরাসের মিউটেশন হতে পারে আপনার শরীরেই। সেই শঙ্কাটা বাড়তে দেবেন না। গোড়া থেকে যথাযথ চিকিৎসা হলে কোভিড সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। সাবধান থাকুন, সতর্ক থাকুন।