ডেল্টার পরেই মুক্তি মিলবে কোভিড থেকে, এমনই একটা তত্ত্ব মাথাচাড়া দিচ্ছে, কিন্তু এত আগে থেকে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনও আসেনি। আপাতত ইংল্যান্ড, আমেরিকায় সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, তার মূলে ডেল্টা স্ট্রেন। ভারতে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেল্টার মিউটেশন ডেল্টা প্লাস।
কিন্তু ডেল্টাই করোনাভাইরাসের সবচাইতে ছোঁয়াচে ও শক্তিশালী মিউটেশন, এর পর থেকে তা ক্রমশ শক্তি হারাবে –এখনই এই ধরনের মতবাদে বিশ্বাস করার কোনও কারণ আছে কী? তার আগে অবশ্য ভাইরাসের মিউটেশনের কারণ ও পদ্ধতি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে রাখা দরকার। ভাইরাসের মিউটেশনের মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই মানুষের ইমিউনিটিকে ফাঁকি দেওয়া। আগের সংক্রমণ বা টিকার কারণে আপনার শরীর ক্রমশ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছে, আর ভাইরাসও টিকে থাকার উদ্দেশ্য নিয়ে সেই দুর্গে ফাটল ধরাতে চাইছে – এই হল সমীকরণ।
এই কাজটা করতে গিয়ে ভাইরাস তার স্পাইক প্রোটিনে নানা পরিবর্তন আনছে। তার কোনওটি খুব শক্তিশালী, কোনও কোনওটি আবার তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। যতক্ষণ না ভাইরাসের প্রোটিনের কার্যকারিতায় পুরো বদল আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিউটেশন সম্পূর্ণ হয় না। এখনও পর্যন্ত করোনার মিউটেশন বার বার মানবশরীরের কোষের নিরাপত্তার বেড়া টপকেছে খুব সহজে।
বিশেষ করে ডেল্টা প্লাস আগের ইনফেকশন ও ভ্যাকসিনের কারণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও হারিয়ে দিতে পারছে। তাই একবার আক্রান্ত হওয়ার পরেও মানুষ ফের করোনার কবলে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ভ্যারিয়ান্ট অফ কনসার্ন বা চিন্তার কারণ আখ্যা দিয়েছে।
তবে সেই সঙ্গে এমনটাও দেখা গিয়েছে যে ভ্যাকসিনেশনের পর যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম। তার মানে, আপনি যে টিকাই নিন না কেন, সেটি যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
ডেল্টা ধীরে ধীরে ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ছে। ‘নেচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে যে সব দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গভীর, সেখানেই দাপট দেখাচ্ছে ডেল্টা। দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন তৃতীয় ওয়েভ চললেও বিটা ভ্যারিয়ান্টের কারণে হচ্ছে। ব্রাজিলের তৃতীয় ওয়েভের কারণ গামা ভ্যারিয়ান্ট।
তাই এখনই বোঝা যাচ্ছে না ঠিক কতগুলো মিউটেশনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে করোনা ভাইরাস। এমন হতেই পারে যে এর পর তা ধীরে ধীরে শক্তি হারালো, আবার এমনও হতে পারে যে আরও শক্তিশালী মিউটেশন হল ভাইরাসের প্রোটিনে।
নিজেকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে গেলে আপনি কী করবেন?
. মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখুন। হ্যাঁ, আমরা সবাই খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কোনও কিছুই ভালো লাগছে না, গ্রাস করছে অসহায়তা। সব ঠিক। কিন্তু তার মধ্যেও বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।
. ভ্যাকসিন নিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ভ্যাকসিন নিতে যত দেরি হবে, তত দেরি হবে হার্ড ইমিউনিটি পেতে।
. একান্ত বাধ্য না হলে ভ্রমণ করবেন না।
. খুব কাছের মানুষদের সঙ্গেও বদ্ধ জায়গায় বা ঘরের মধ্যে বেশি সময় কাটাবেন না, এখনও ঘরোয়া পার্টিতে যোগ দেওয়ার সময় আসেনি।
. পুষ্টিকর খাবার খান, শরীর সুস্থ রাখুন। খানিক ব্যায়াম করাও জরুরি।
. মেনে চলুন সব কোভিড প্রোটোকল।