আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে গোটা পৃথিবীতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন ছাপিয়ে যাবে বলে আশঙ্কার প্রহর গুনছে WHO। যে সব দেশে ভ্যাকসিনেশনের সংখ্যা বেশি, সেখানেও অবাধে রোগ ছড়াচ্ছে ডেল্টা। কিছু সমীক্ষা বলছে, এর প্রতাপ এতই বেশি যে তা মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও হারিয়ে দিচ্ছে!
যেমন ধরুন, আমেরিকা ও ইউরোপের কিছু উন্নত দেশে টিকাকরণের হার খুব ভালো। সেখানে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি টিকা নেওয়ার পর যখন নিয়ম শিথিল করা হল, তখনই ত্রাস সৃষ্টি করতে আরম্ভ করে দিল ডেল্টা ভ্যারিয়ান্ট। ইংল্যান্ডেও এক অবস্থা – রোজ যত মানুষ সেখানে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার ৯০% জন্যই দায়ী এই স্ট্রেন।
যে সব দেশে টিকাকরণের হার কম, সেখানে তো ডেল্টার প্রতাপ ভয় ধরাচ্ছে রীতিমতো। ইন্দোনেশিয়ায় ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্ত বহু শিশুর মৃত্যুও হচ্ছে – তা বাড়তি চিন্তার কারণও বটে। এ দেশেও এখন যত রোগী কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার সিংহভাগই ডেল্টার শিকার। গত অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে প্রথম প্রতাপ বেড়েছিল করোনা ভাইরাসের এই স্ট্রেনের, তার পর থেকেই তার প্রতাপ চলছে। সেকেন্ড ওয়েভে তা মারাত্মক চেহারাও দেখিয়েছে।
আরও চিন্তা বাড়িয়েছে ‘দ্য ল্যানসেট’ নামক প্রথমসারির বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষা। সেখানে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল গবেষক বলেছেন, টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষের উপর তাঁরা পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর বড়োজোর ১০ সপ্তাহ ইমিউনিটি শীর্ষে থাকছে, তার পর থেকেই টিকার এফেক্ট কমতে আরম্ভ করে।
দুটো ডোজ যাঁরা নিয়ে ফেলেছেন, তাঁরা মাস তিনেক রোগ প্রতিরোধ করতে পারছেন সহজে, তার পর থেকে কিন্তু ফের মাস্ক ব্যবহার করা আর সতর্কভাবে কোভিডবিধি মেনে চলা একান্ত জরুরি। এই গবেষকদের বক্তব্য হচ্ছে, যাঁরা সবার আগে টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা এখন সবচেয়ে বেশি। তাই ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কারদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত আগে।
কোন টিকা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা জোগাচ্ছে? এই সমীক্ষার উপর বিশ্বাস করলে মানতে হবে ফাইজারের টিকার কোর্স যাঁরা কমপ্লিট করেছেন, তাঁরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফলভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেন। তুলনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের অ্যান্টিবডি রেসপন্স দুর্বল। ভারতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটিই কোভিশিল্ড নামে চলছে – তাই আপাতত সবাইকেই কোভিড সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে।
. ভিড়ের মধ্যে যাবেন না
. সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলুন
. যথাযথভাবে মাস্ক পরুন
. একান্ত প্রয়োজন না হলে বাড়ির বাইরে যাবেন না
. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নিন। সেটাই আপনার সুরক্ষাকবচ। ইমিউনিটি কমলেও টি-সেল অনুপ্রবেশকারী ভাইরাসকে ঠিক চিনে নেবে — এমনটাই বলছেন ডাক্তাররা।