৬০ বছরে পা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই আচমকা হৃদরোগে প্রয়াত হলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। ইদানীং তাঁর ওজন বেড়ে গিয়েছিল, নানা শারীরিক সমস্যাও ছিল। সপ্তাহ দুয়েক আগে মস্তিষ্কে জমাট বাঁধা রক্ত অপারেশন হয়েছিল, ছাড়া পাওয়ার পর থেকে বাড়িতেই ছিলেন।
মারাদোনার মতো বর্ণময় চরিত্র ফুটবল বিশ্ব খুব বেশি দেখেনি। ১৯৮৬ সালে তাঁর হাত ধরেই বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ডকে সেবার ছিটকে যেতে হয়েছিল তাঁর বিখ্যাত ‘হ্যান্ড অফ গড’ গোলের সৌজন্যে। তার পর থেকে বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়েনি কোনওদিন। ড্রাগ আর মদের নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন একটা সময়ে, বার বার যেতে হয়েছে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে। ছিল মহিলাঘটিত কেচ্ছাও। কিন্তু সব কিছুই ম্লান হয়ে যেত তাঁর পায়ের জাদুতে।
ইতালির লিগে তিনি খেলতে আরম্ভ করেন ১৯৮৪ সাল থেকে, তার অন্তত বছর দুয়েক আগে থেকেই কোকেন নেওয়া শুরু করেছিলেন। ২০১৪ সালের এক সাক্ষাৎকারে নিজেই আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “ড্রাগস না নিলে যে আমি প্লেয়ার হিসেবে কোন উচ্চতায় পৌঁছতে পারতাম, তা ভাবলে নিজেরই খারাপ লাগে খুব! আমার বিরোধী পক্ষ তো স্রেফ আমার নেশার সুযোগ নিয়েই কত ম্যাচ জিতে নিয়েছে!” ফুটবলের মতো খেলায় শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা দিতে হয় সর্বক্ষণ – সেখানে ড্রাগ অ্যাডিক্ট হয়ে যে প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখিয়েছেন মারাদোনা, সেটুকুতেই গোটা বিশ্ব তাঁকে মাথায় তুলে রেখেছিল। ইনি ডিসিপ্লিনড হলে তা হলে কী হত?
১৯৯১ সালে যখন মারাদোনা কেরিয়ারের মধ্য গগনে, তখনই কোকেন আসক্তির প্রমাণ পেয়ে তাঁকে বরখাস্ত করে নাপোলি ক্লাব। এর কয়েক মাস পর নিজের বাড়ি থেকে তাঁকে প্রচুর কোকেনসমেত গ্রেফতার করা হয়। ১৯৯৪-এ আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে ফেরেন, কিছুদিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাঁচ ধরনের এফিড্রিন একসঙ্গে ব্যবহার করার অপরাধে বরখাস্ত হন।
এর পর কিছুদিন ঘরোয়া ফুটবল খেলেছেন, কিন্তু বার বার তাঁর রক্তে বা মূত্রে ড্রাগের নমুনা মিলেছে। একবার ঘোষণাও করেন যে, “আমি ড্রাগ নিতাম, নিই এখনও এবং ভবিষ্যতেও নেবো।” ২০০০ সাল থেকে ক্রমাগত ভুগতে আরম্ভ করেন। ড্রাগ ওভারডোজ হয়ে মরতে বসেছিলেন, একের পর এক অপারেশন হয়েছে। একটা সময়ে ড্রাগ ছেড়ে মদের নেশা পেয়ে বসে এই ফুটবল লেজেন্ডকে। ততটাই কর্দমাক্ত ছিল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনও।
মারাদোনার সমসাময়িক ইংলিশ ফুটবলার গ্যারি লিনেকার তাঁর মৃত্যুর পর একটি টুইট করেছেন, তার সারমর্ম, ‘আমার প্রজন্মের সেরা তো বটেই, দিয়েগো হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। আশীর্বাদধন্য কিন্তু খুব কষ্টের জীবনের শেষে ঈশ্বরের হাতে যেন ও সুখে থাকে – এই কামনাই করি!’ এর চেয়ে বেশি আর কীই বা চাওয়ার থাকতে পারে?