বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে নানা ভ্যাকসিন আমরা সবাই নিয়েছি এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে যে বিজ্ঞানের সামনে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে অসুখ – এক সময়ের ত্রাস স্মলপক্স বা গুটিবসন্ত এখন লুপ্তপ্রায়। কলেরা, কালাজ্বর বা পোলিওর খবরও শোনা যায় না তেমন। যেহেতু আজকালকার বাচ্চাদের চিকেন পক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাই সে রোগের প্রকোপও কমে গিয়েছে।
যে কোনও জীবাণুর আক্রমণ হলে আমাদের শরীর এমনিতেই অ্যান্টিবডি তৈরি করে তার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে – সৃষ্টির আদিকাল থেকে তেমনটাই হয়ে এসেছে। ভ্যাকসিনের কাজ হচ্ছে বিশেষ বিশেষ রোগের বিরুদ্ধে ‘টার্গেটেড অ্যান্টিবডি’ গড়ে তোলা। তার জন্য নিষ্ক্রিয় জীবাণু শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
তার পর শরীর নিজের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তখনই ইনফ্ল্যামেশনের কারণে গায়ে-হাতে ব্যথা হয়, জ্বর আসে। কয়েকদিনের মধ্যে তা সারে এবং দিন দশেকের মধ্যেই শরীর রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ইনফ্ল্যামেশন খুব বেশি হয় না — তাই জ্বর না এলে আপনার ভ্যাকসিন কাজ করছে না এমনটা ভাবাও ঠিক নয়।
আমাদের স্মৃতিশক্তির মতোই শরীরও কিন্তু সব অ্যান্টিবডির কথা খেয়াল রাখতে পারে না, কিছুদিন পরে পরে তাকে মনে করিয়ে দিতে হয়। MMR ভ্যাকসিন দেওয়া হয় মামস, মিসলস আর রুবেলা ইনফেকশন ঠেকাতে। ছেলেবেলায় দেওয়া এই টিকা কার্যকর থাকে সারা জীবন। আবার ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ কমাতে যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তার কার্যকাল মাত্র এক বছর – তার পরেই শরীরে অ্যান্টিবডি থাকে না আর। তাই প্রতি বছর একবার করে এই ভ্যাকসিন নিতে হয়।
কোভিড ১৯ যে ভাইরাসের কারণে হয়, সেই করোনা ভাইরাসের আরও নানা রকমফের আছে এবং তার সঙ্গে আমাদের শরীরের অল্পবিস্তর পরিচয় আছেই। এর কারণেই জ্বর বা সর্দি-কাশি হয়। তবে কোনওটির কারণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিই শরীরে বেশিদিন থাকে না। নোভেল করোনাভাইরাসের ফলেও যদি তেমনটাই হয়, তা হলে ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ লাগবে।
তবে এখনও এ নিয়ে গবেষণা চলছে, কোনও নির্মাতাই নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারবেন না। তা ছাড়া অতিমারি পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিন নেওয়া হলেও আপনাকে সব রকম সাবধানতা মেনে চলতে হবে, অন্য কোনও রাস্তা নেই। মাস্ক পরুন, বার বার হাত ধুয়ে নিন, একান্ত দরকার না পড়লে বাড়ির বাইরে যাবেন না। বাইরে থেকে কেউ এলে বাড়ি ভালো করে স্যানিটাইজ করে নিন।