- সম্প্রতি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেখে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে পরিবেশবিদদের মধ্যে। তাডোবা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাফারিতে গিয়ে একদল ট্যুরিস্ট লেন্সবন্দি করেছেন একটি বাঘের প্লাস্টিক বোতল নিয়ে খেলার ছবি। কয়েক সেকেন্ডের ভিডিওর শেষ দিকে গিয়ে দেখা যায়, বাঘটি জলের খালি বোতল মুখে নিয়ে হাঁটা দিল গভীর জঙ্গলের দিকে।
এর ফল হতে পারে মারাত্মক। প্লাস্টিক দূষণের কথা তো বাদ দিন, বাঘ বা কোনও প্রাণি যদি বোতল বা প্লাস্টিকের ব্যাগ গিলে ফেলে খাবার ভেবে, তা হলে তার মৃত্যু হতে পারে। এভাবে প্রচুর গৃহপালিত গরু-মোষ-ছাগল-উট মারা যায় প্রতি বছর। কিছুদিন আগে এই তাডোবাতেই অন্য একটি বাঘ ও একটি হরিণকে প্লাস্টিক প্যাকেট নিয়ে খেলতে দেখা গিয়েছিল – বোঝাই যাচ্ছে, ক্রমশ সমস্যাটা গভীর জঙ্গলের প্রাণিদেরও জীবনের সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছে।
এমনিতে মহারাষ্ট্র বন বিভাগের নিয়ম কানুন যথেষ্ট কড়া, ট্যুরিস্টরা তা অমান্য করলেই জরিমানা দিতে হয়। সমস্ত সাফারির গাড়িতে কাপড়ের ব্যাগ রাখা থাকে বর্জ্য ফেলার জন্য, গাইডরা সব সময় খেয়াল রাখেন যাতে পর্যটকেরা সব নিয়ম মেনে চলেন। তাই যাঁরা পর্যটকদের বনদূষণের জন্য দায়ী করছেন, তাঁরা একশোভাগ ঠিক না-ও হতে পারেন।
নানা প্রশ্নও উঠতে আরম্ভ করেছে। জঙ্গলের মধ্যে বেশ কিছু গ্রাম আছে, সেখানকার অধিবাসী বা তাঁদের অতিথিরা সব নিয়ম পালন করছেন তো? ও সব এলাকায় নানা তামাকজাত জিনিস খাওইয়ার চল আছে, তা বিক্রি হয় চকচকে প্যাকেটে – সে সব অবহেলায় জঙ্গলে ফেলা হচ্ছে না তো? বৃষ্টির জলে বাইরে থেকে জঙ্গলে প্লাস্টিক ভেসে আসছে না তো? মনে রাখতে হবে, পাহাড়ে কিন্তু স্রেফ জলের তোড়ে ভেসে আসা প্লাস্টিকে নালার মুখ বন্ধ হয়ে প্রতি বছর বর্ষাকালে বিরাট বিপর্যয় হয়, রাস্তায় ধস নামে।
এত যুক্তি-তর্কে না ঢুকে একবার নিজেদের দিকে তাকানো যাক। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি নিজেদের কিছু ত্রুটি শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে এবার। আপনি বেড়াতে যান বা বাড়িতে থাকুন – সব সময়ে এই নিয়মগুলি মেনে চলার চেষ্টা করুন। তা হলেই তা শিখবে আপনার সন্তান এবং বেঁচে থাকাটা নিশ্চিতভাবেই সুন্দর হয়ে উঠবে।
১. আপনার কাজ মিটে গেলেই বোতল বা মোড়ক ছুড়ে ফেলবেন না
ভেবে দেখুন, আমি-আপনি সবাই একেবারে ছেলেবেলায়, প্রি-স্কুল স্তরে শিখেছিলাম যে চকোলেট খেয়ে মোড়ক ফেলতে নেই ক্লাসরুমে, লেবুর খোসা বা বিস্কিটের খালি প্যাকেট ভরে রাখতে হয় টিফিন বক্সে। বাড়ি গিয়ে তা ডাস্টবিনে ফেলা উচিত। বড়ো হতে গিয়ে সব ভুলে গেলাম, তাই না? একটু দায়িত্ব নিন, খালি বোতল বা প্যাকেট জমা করে রাখুন, ডাস্টবিন দেখলে সেখানেই ফেলবেন।
২. কাচ বা কোনও ধারালো বর্জ্য ফেলুন দায়িত্ব নিয়ে
ধরুন, মাইক্রোওয়েভে মাংস গরম করতে গিয়ে ভেঙে গেল আপনার সাধের একটি বাটি। কী করবেন? বাটি ফেলে দেবেন তো? কিন্তু রোজের বর্জ্যের সঙ্গে তা না ফেলাই ভালো। কোনওভাবে যদি তা রাস্তার ধারে কোথাও ফেলে দেওয়া হয় এবং কোনও কুকুর খাবারের গন্ধে প্যাকেটে মুখ দেয়, তা হলে কিন্তু সে মারাত্মক আহত হবে।
৩. আপনি কতটা বর্জ্য তৈরি করছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন
চেষ্টা করুন যথাসম্ভব কম বর্জ্য তৈরি করতে। আপনি তিন প্যাকেট বিস্কিট খেলে যতটা প্লাস্টিক মাটিতে মিশবে, একটি আপেল, দুটি কলা আর এক বাটি ছোলা সেদ্ধ খেলে কি তা হবে? উলটে আপনার শরীরও ভালো থাকবে! প্রতি পদে সতর্ক হয়ে নয়া চললে কিন্তু পরিবেশ বাঁচানো মুশকিল।
৪. সবুজ নষ্ট করবেন না
চেষ্টা করুন সবুজের পরিমাণ বাড়ানোর, কোনওভাবেই একটি গাছকেও আঘাত দেবেন না। বাড়ির তরুণতম সদস্যকেও সেটাই শেখান। গাছ কাটলে বাড়বে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ, তাতে বাড়বে দূষণ।
৫. নিত্যনতুন পোশাক বা আসবাব কিনবেন না
সময় এসেছে খুব সতর্ক জীবন যাপন করার। জানেন কি, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির কারণে প্রচুর বর্জ্য তৈরি হয়, দূষিত হয় জল? আর নিত্যনতুন আসবাব বানানো মানেই হচ্ছে বন ধ্বংসের পরোক্ষ কারণ হয়ে ওঠা। দরকারে সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস ব্যবহার করার কথা ভাবতে পারেন।