তা হলে আপনার কিছু জরুরি কথা জানা খুব দরকার। সিবিএসই বোর্ড ক্লাস টেনের পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছে, বারো ক্লাসের পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। আইসিএসই ও আইএসসি, দুটো পরীক্ষাই স্থগিত। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চশিক্ষা পর্ষদও সম্ভবত সেই পথেই হাঁটবে।
এমন অনিশ্চয়তা গত একশো বছরে দেখেনি মানুষ, এভাবে পরীক্ষা বাতিল বা স্থগিত হলে কী করা উচিত, তা বুঝতেই পারছে না কিশোরবয়স্ক ছাত্রছাত্রীরা। দীর্ঘদিন স্কুলে যাওয়ার পাট নেই, অনলাইন ক্লাসে বিস্তর ফাঁক-ফোকর থাকে, তা গলে দেদার ফাঁকি মারা যায়। তাদের মনঃসংযোগ বা ফোকাসের অবস্থা খারাপ, লেখার অভ্যেস চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ভবিষ্যতের ছবিটাই ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে!
অনিশ্চয়তা থেকে জন্ম নেয় আতঙ্ক, সিদ্ধান্তহীনতা, ডিপ্রেশন, আগ্রাসন। তাই যাঁরা অভিভাবক, তাঁদের অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সন্তানের প্রতি, তাকে পরম যত্নে আগলে রাখতে হবে। তার যদি একবার মনে হয় সে একা এবং পরিবার তার পাশে দাঁড়াবে না, তা হলে সে ধীরে ধীরে কোন অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, আন্দাজও করতে পারবেন না।
. স্কুল যে পরীক্ষা নিচ্ছে, তাতে বাচ্চার ফল খারাপ হয়েছে? বকাঝকা করবেন না। একা আপনার বাচ্চা নয়, পরিসংখ্যান বলছে অনলাইন শিক্ষা চালু হওয়ার পর থেকে মেধাবী বলে পরিচিত ছাত্রছাত্রীদের গড় প্রাপ্ত নম্বর অনেকটাই কমেছে।
. স্কুলে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে টানা ছয়-সাত ঘণ্টা থেকে নিয়ম করে পড়াশুনো করা আর বাড়িতে নিজের ঘরে বসে অর্ধেক ইউনিফর্ম পরে ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে ক্লাস করার মধ্যে ফারাক আছে। আপনার ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে যে অসুবিধে হচ্ছে, ঠিক সেই অসুবিধের মধ্যে দিয়েই যাচ্ছে আপনার সন্তানও।
. পরীক্ষা বাতিল হওয়া বা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিক চাপ পড়ছে পড়ুয়াদের উপর। তারা বুঝতেই পারছে না আগামী দিনে কী হতে চলেছে। পরীক্ষা কবে হবে তার ঠিক নেই, আদৌ হবে কিনা বোঝা যাচ্ছে না – এই পরিস্থিতিতে মোটিভেশন হারিয়ে ফেলাটাই স্বাভাবিক।
. ‘পড়াশোনা করে আর কী হবে, পরীক্ষাই তো হচ্ছে না’ মার্কা মানসিকতা তৈরি হতে দেবেন না কখনও। তা হলে মূল স্রোতে ফিরে আসাই মুশকিল হবে। মনের জোর জোগান, কথা বলুন বাচ্চার সঙ্গে। তাকে দিয়ে টেস্ট পেপার সলভ করান। তার শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন নিয়মিত।
. আমাদের দেশের যা শিক্ষাব্যবস্থা, তাতে প্রাইভেট টিউশনের প্রয়োজনীয়তা অসীম। মা-বাবা প্রচুর খরচ করেন বাচ্চার লেখাপড়ায় – এ সত্য তারাও জানে। তাই বারবার মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার নেই, তাতে হতাশা বাড়বে।
. যারা ক্লাস নাইন থেকে টেনে উঠেছে, তাদের বলুন প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাস অ্যাসেসমেন্ট মন দিয়ে করতে। সামনের বছর যে কী হবে, তা এখন থেকে বলা মুশকিল। তাই পুরো বছর মন দিয়ে লেখাপড়া করা একান্ত জরুরি।