অনেকেই এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেন, কেন, গাছপালা থেকে! এ তো আমরা ছেলেবেলাতেই শিখেছি, তাই না? উত্তরটার আধখানা ঠিক। কারণ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি অক্সিজেনের জোগান দেয় সমুদ্র। আরও ভালোভাবে বললে, সমুদ্রে জন্মানো নানা ধরনের প্ল্যাঙ্কটন বা এককোষী উদ্ভিদ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক পত্রিকার সমীক্ষা বলছে, পৃথিবীর রোজের অক্সিজেনের জোগানের ৭০ শতাংশ আসে প্ল্যাঙ্কটন থেকে। বাকি প্রায় ২৮ শতাংশ মেলে আমাজনের বর্ষাবন থেকে। আর দুই শতাংশ আসে আমাদের আশপাশের গাছপালা ও অন্যান্য উৎস থেকে। তবে একদল বিজ্ঞানী আবার মনে করেন যে সমুদ্র থেকে পাওয়া যায় ৫০ শতাংশ, বাকিটা পৃথিবীর গাছপালাই জোগান দেয়।
কীভাবে এতটা অক্সিজেন তৈরি করে সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন? প্রথমত বলে নেওয়া যাক, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের পুরোটাই এই ক্ষুদ্র এককোষী উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। এই জীবগুলিকে খেয়ে বেঁচে থাকে নিরামিষভোজী প্রাণিরা। তাদের খায় ছোটো আকারের মাংসাশী প্রাণী, সেগুলিকে গলাধঃকরণ করে বাঁচে হাঙর, তিমি, সিলের মতো বড়ো প্রাণি।
প্ল্যাঙ্কটন নিজের এনার্জি তৈরি করে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে, জলের পোষণ আর কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নিয়ে। বিনিময়ে তা জলে ও বাতাসে অক্সিজেন ছাড়ে। কেবল প্রোক্লোরোকক্কাস নামক একটি ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন থেকেই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন যুক্ত হয় পৃথিবীর বাতাসে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের অভিযাত্রী ও বিজ্ঞানী ডা. সিলভিয়া এ আর্লের গবেষণা বলছে যে, আমরা সারাদিনে যতটা অক্সিজেন টেনে নিই শ্বাসের মাধ্যমে, তার এক পঞ্চমাংশের জোগান দেয় এই একটি আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ! বুঝতেই পারছেন, সমুদ্রের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বাঁচিয়ে রাখা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
একটা ব্যাপার খুব পরিষ্কার, সমুদ্রের জল থেকে বা গাছপালা থেকে আগে যে পরিমাণ অক্সিজেন পাওয়া যেত, এখনও তাই যায়। মানুষ নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছে, বাতাসে মিশছে ডিজেল, পেট্রোল, কয়লার ধোঁওয়া – ফলে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ। সেই কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও চড়ছে ক্রমশ। নোংরা হচ্ছে সমুদ্রের জল, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বাসস্থানেও আসছে পরিবর্তন।
কিছু বিজ্ঞানী মনে করেন, সমুদ্রের জলে বেশি করে লোহা মিশলে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের বংশবৃদ্ধি হবে দ্রুত। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন বাড়লে তা বেশি করে কার্বন শোষণ করে নেবে এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমবে। আর এক দলের মত হচ্ছে, এভাবে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো অনুচিত। কারণ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কার্বন শোষণ করে সালোকসংশ্লেষের সময়ে। তখন সূর্যালোকও শোষিত হয়। রোদের তাপে পৃথিবীর তাপমান আরও বেড়ে গেলেও ভয়ানক বিপদ হবে।
তার চেয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের স্বাস্থ্যরক্ষার দায় নেওয়ার চেষ্টা করুন আজ থেকেই। কার্বন ফুট প্রিন্ট কমাতে হবে সবাইকে। গাড়ির ব্যবহার কমান, পায়ে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার অভ্যেস তৈরি করুন। পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক তবু মন্দের ভালো, স্ট্র, বল পেনের রিফিলের মতো ইউজ অ্যান্ড থ্রো জিনিসপত্রের বেশিরভাগটাই সমুদ্রতলে জমা হয়। তাই সাবধান। স্থানীয় খাবার খান, সমুদ্রের ধারে বেড়াতে গেলে কোনও বর্জ্য ফেলে আসবেন না।