কোভিড একেবারেই নতুন একটি রোগ এবং তার সম্পর্কে এখনও অনেক কিছুই জানতে বাকি আছে আমাদের। তবে সারা বিশ্ব থেকে যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা কোভিডের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে, এঁদের ফুসফুসও আক্রান্ত হচ্ছে তাড়াতারী।
কেন এমন হয়?
ওবেসিটি বা ওজন বেশি থাকলে কিন্তু কোভিড নয়, আপনার যে কোনও অসুখ সামলাতেই সমস্যা হবে। একটু মেদের পরত না থাকলে চেহারায় লাবণ্য আসে না, এমন একটা বিশ্বাস নিয়ে চলি আমরা বাঙালিরা। কিন্তু এ রকম ধারণার কোনও মাথামুন্ডু নেই।
কার্যত দেখা যায়, যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা শারীরিকভাবেও দুর্বল। সমস্যাটা শুরু হয় বেশি খাওয়া থেকে – খাবারের মূল কাজ হচ্ছে শরীরকে এনার্জির জোগান দেওয়া। সেই এনার্জি রোজ খরচ করে ফেলতে হবে, বাড়তি হলেই শরীর তা মেদ হিসেবে জমা রাখবে। এই যে আমরা টিভির বিজ্ঞাপন আর ফুড অ্যাপের লোভনীয় অফারের হাতছানিতে ভুলে যখন-তখন যা ইচ্ছে হচ্ছে খাচ্ছি, তাতে নিজের ছাড়া কারও ক্ষতি হচ্ছে না কিন্তু!
শরীর যদি সারাক্ষণ খাবার ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত করতে ব্যস্ত থাকে, তা হলে বাকি কাজগুলো ঠিকঠাকভাবে করা সম্ভব হয় না। ফলে একদিকে মেদ বাড়ে, অন্যদিকে শুরু হয় হরমোনের সমস্যা। বিপাকের হার মন্দীভূত হওয়ার ফলে বাড়ে ডায়াবেটিস, মেদের কারণে কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। আর শহুরে জীবনযাত্রার কারণে আমরা সবাই কায়িক শ্রমের থেকে দূরে সরে গিয়েছি – ফলে জীবনধারণের জন্য আজকাল অনেক কম এনার্জি খরচ হয়।
বাড়তি মেদের কারণে অ্যাডিপোস টিস্যুর আর্কিটেকচারে বদল আসে, ফলে শরীরে ইনফ্ল্যামেশন বেড়ে যায়। কথায় কথায় অ্যালার্জি, ব্যথা-বেদনা-হজমের সমস্যা লেগেই থাকে।
এই অবস্থায় যদি কোভিডের মতো নতুন ভাইরাস আক্রমণ করে, তা হলে আপনার দুর্বল শরীর যে চট করে ভেঙে পড়বে সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? তাই পুরো পরিবারের সবাইকে সুস্থ করে তোলার দায়িত্বটাই আপাতত আমাদের সবার প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিত।
অনেকেই ভাবেন, ওজন কমানোর যাত্রাপথটা খুব কঠিন হয়। ব্যাপারটা কিন্তু আদৌ তা নয়। আপনাকে খুব প্ল্যান করে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। জিভের স্বাদে খেলে নিজের বিপদ বাড়বে – অতিমারি চলার সময়ে সেটা কি আপনি চাইবেন? মেনে চলুন খুব সহজ কয়েকটা নয়ম, তা হলেই ফল পাবেন!
. প্যাকেটজাত কোনও খাবার খাবেন না, তা সে বিস্কিট হোক, চানাচুর হোক, কেক হোক, বা পাউরুটি – সব বাদ। আপনাকে নিজের পরিবারের রোজের সব খাবার রান্না করতে হবে। দরকারে সবাই মিলে লেগে পড়ুন, দায়িত্ব ভাগ করে নিন – তাতে ক্যালোরি খরচ বাড়বে।
. কিনওয়া, বাজরা, অ্যাভোকাডো, সোয়া মিল্ক ছাড়াও সুস্থ থাকা যায়! রোজের শাক-ভাত-ডাল-তরকারি খান, কিন্তু পরিমাণ কমিয়ে দিন। ভাজাভুজি কমান। এক বাটি ভাত খেলে দু’বাটি তরকারি খেতে পারেন। তাতে পেট ভরবে, শরীরও ভালো থাকবে।
. স্থানীয় সব সবজি, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপে, ঝিঙে, লাউ, বরবটি, এঁচোড়, উচ্ছে, বেগুন স্বাচ্ছন্দে খাওয়া যায়, রান্নাটা কম তেলে করুন। একটা সবজি স্রেফ সেদ্ধ করে খান। যাঁরা চারটে রুটি খেতেন, তাঁরা ধীরে ধীরে কমাতে থাকুন। আপনার ডাল, সবজি, ফলেও কার্বোহাইড্রেট আছে, ভাত বা রুটির শ্বেতসার না পেলেও শরীরের কোনও অসুবিধে হবে না।
. ফল খান। দামি ফলের দরকার নেই, তরমুজ, শসা, পেঁপে, জামরুল, আঙুরেই চলবে। তবে ফল দিনের বেলায় খেয়ে নেওয়াই ভালো।
. রাতের খাবার শেষ করুন সাড়ে আটটার মধ্যে। রাতের খাবার হবে সবচেয়ে হালকা।
. দিনের মধ্যে সুবিধেমতো একটা ঘণ্টা বেছে নিন হাঁটাচলা করার জন্য। ছাদে বা লনে পায়চারি খান, শরীর সুস্থ থাকলে হালকা জগিং করতে পারেন।
. জল খান অন্তত ৫ লিটার। এক লিটারের বোতল দিনে পাঁচবার খালি করলে হিসেব ঠিক থাকবে।
. ছাতু, ডিম, ছানা, দই, দুধ, সোয়াবিন, ছোলা, রাজমা, মাছ, মুরগি, খাসি – প্রত্যেকটিই প্রোটিনের উৎস। আমিষ ও নিরামিষ প্রোটিনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বানিয়ে নিন নিজস্ব ডায়েট প্ল্যান।
. তেল, ঘি, মাখন একেবারে বাদ দেওয়ার দরকার নেই, অল্প করে খেতেই পারেন।
. কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি রোজ খাবার জিনিস নয় – এটা আপনাকে বুঝতে হবে। মাঝে সাঝে বিশেষ অনুষ্ঠানে খেতেই পারেন, কিন্তু ঘন-ঘন প্রলোভন এড়ান। চিনি বা গুড় খাওয়াও কমাতে হবে।