এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগে কয়েকটি একান্ত জরুরি বিষয় জেনে রাখা খুব দরকার। আমরা জানি, সারা দেশে অক্সিজেনের আকাল দেখা দিয়েছে, হাসপাতালগুলি পর্যন্ত মাঝে মাঝেই চরম সঙ্কটে পড়ছে। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হল আচমকা?
কারণ পরিষ্কার, কোভিড রোগীর সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সেই হারে অক্সিজেন মজুত করে রাখার কথা ভাবেনি কোনও হাসপাতালই। অক্সিজেন তৈরির একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে, রাতারাতি তা বাড়ানো যায় না। বাড়ালেও যে রাজ্যগুলিতে তার উৎপাদন হয়, সেখান থেকে অন্যত্র চটজলদি পাঠানো যায় না ক্রায়ো-ট্যাঙ্কার না থাকলে।
পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ওড়িশার প্লান্ট থেকে দিল্লি এয়ারলিফট করে অক্সিজেন নিয়ে গিয়েছে আপৎকালীন চাপ সামাল দেওয়ার জন্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জার্মানি থেকে প্লেনে মোবাইল অক্সিজেন জেনেরেশন প্লান্ট নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে যত দ্রুত সম্ভব।
এর মধ্যে বহু মানুষ বাড়িতে ছোটো ছোটো সিলিন্ডার সংগ্রহ করে রাখছেন যাতে বয়স্ক মা-বাবা বা সিওপিডি আক্রান্ত কোনও অসুস্থ আত্মীয়ের বিপদের সময়ে অক্সিজেন দেওয়া যায়। ফলে সঙ্কট চরমে উঠেছে। বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রায় নেই।
কিন্তু যাঁরা ডাক্তার নন, তাঁরা কি আদৌ বিপদটা আঁচ করতে পারবেন? সময়ে ঠিকমতো অক্সিজেন দিয়ে বাড়িতেই কি খুব সিরিয়াস রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব?
এর উত্তর জানার আগে জানতে হবে অক্সিজেন কীভাবে কাজ করে? প্রকৃতি থেকে শ্বাসবায়ুর সঙ্গে আমরা যে অক্সিজেন টেনে নিই, তা কিন্তু শুদ্ধ নয়। বাতাসে অন্য আরও পাঁচটা গ্যাসের সঙ্গে তা মিশে থাকে – স্রেফ অক্সিজেন থাকে ২১ শতাংশ মতো।
কোনও রোগী যখন সিভিয়ার কোভিডে আক্রান্ত হন, তখন তাঁর মেডিক্যাল অক্সিজেন লাগে – এক্ষেত্রে ৮২ শতাংশ খাঁটি অক্সিজেন ব্যবহার হয়। এই অক্সিজেন শরীরে পৌঁছলে তবে আপনার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হবে, শরীরের সব কোষ ঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি থাকলে ধীরে ধীরে কোষ কাজ করা বন্ধ করে দেবে, মানুষের মৃত্যু হবে।
এবার প্রশ্ন, আপনি রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপবেন কীভাবে? উত্তর হচ্ছে, বাড়িতে পালস অক্সিমিটার থাকলে তা সহজেই করা সম্ভব। এমনিতে বুকে ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা না থাকলে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখার কথা কারও মাথায় আসে না। তবে সাধারণত সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের রক্তে অক্সিজেনের স্যাচুরেশন হয় ৯৫ শতাংশের আশেপাশে। কারও ৯৮ হতে পারে – তার মানেই সেটা খুব ভালো নয় – কার্যত ৯৫ আর ৯৮ শতাংশের মধ্যে খুব ফারাক নেই।
তবে শুয়ে থাকা অবস্থায়, দৌড়ে বা হেঁটে আসার পরে বা খুব টেনশনের সময়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপতে যাবেন না, আঙুল যেন স্টেডি থাকে, সেটা দেখতে হবে। স্লিপ অ্যাপনিয়া বা সিওপিডি থাকলেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম হতে পারে।
যদি দেখেন আপনার রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বেশ খানিকক্ষণ ৯৪-এর নিচে রয়েছে, হাঁটতে গেলে হাঁফ ধরছে এবং স্যাচুরেশন বাড়ছে না বরং ক্রমশ কমছে, তা হলে বুঝতে হবে যে আপনার মেডিক্যাল অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। হাতের কাছে একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেই কিন্তু তখন আপনার সমস্যা মিটবে না, তার কারণ ঠিক কোন গতিতে কতটা অক্সিজেন আপনার শরীরে যাওয়া প্রয়োজন সেটা প্রশিক্ষিত ডাক্তার ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেন না।
তাই বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকলে প্যানিক করবেন না। থাকলেও নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা ব্যবহার করতে যাবেন না। অবশ্যই কোনও ডাক্তারের পরামর্শ নিন। না বুঝে-শুনে অক্সিজেন ব্যবহার করতে গেলে কিন্তু লাভের চাইতে বেশি ক্ষতিই হবে আপনার!