অতিমারি পরিস্থিতিতে স্রেফ নিজের প্রাণটুকু বাঁচাতেই মানুষের নাজেহাল হওয়ার কথা, কিন্তু কার্যত তার ফলে যে আরও নানা সমস্যা বাড়ছে তা হাতে-কলমে প্রমাণ হয়ে গেল। গত শুক্রবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট যে মন্তব্য করেছে, তাতে এ কথা স্পষ্ট যে গার্হস্থ্য হিংসা ক্রমশ বাড়ছে এ দেশে এবং পণের দাবিতে বধূহত্যার ঘটনাও ঘটে চলেছে।
পণের দাবিতে হত্যার অভিযোগ এলে ঠিক কী করতে হবে, তা নিয়ে নিম্ন আদালত বা পুলিশের জন্য বিশেষ একটি নির্দেশিকা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। মৃতার প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি দেখিয়েও সতর্ক হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, গার্হস্থ্য হিংসা ও পণ দাবি করাটা অত্যন্ত কুপ্রথা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যদি কোনও মহিলার পরিবার অভিযোগ করে যে তাদের মেয়েকে যথেষ্ট পণ না পেয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, তা হলে তাদের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
অত্যাচার ও নির্যাতিতার মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রাথমিক দায়ভার পুলিশের। তবে অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে যে অতিরিক্ত ‘ক্যাজুয়াল অ্যাটিটিউড’ দেখানো হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কোর্ট। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে আইনের চোখে সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
মৃতার স্বামীর পরিবারের সদস্যদের মামলায় জড়ানোর আগে প্রমাণ করতে হবে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের প্রত্যক্ষ যোগ আছে। কোনও নির্দোষ মানুষকে অহেতুক বিব্রত করা যাবে না, বিশেষ করে যদি তিনি ঘটনার সময়ে অকুস্থলে উপস্থিত না থাকেন। শাস্তি ঘোষণার সময়েও নিম্ন আদালতকে সর্বোচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া গণ্ডির মধ্যেই থাকতে হবে।
জাস্টিস এন ভি রামানা ও অনিরুদ্ধ বোসের বেঞ্চ মেনে নিয়েছে যে স্বামীর পরিবারের অন্যায্য দাবিমতো টাকাপয়সা, গয়নাগাঁটির চাহিদা না মেটানোর ফলে এখনও বহু মেয়েকে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয় এ দেশে। বিষয়টি দেশের সরকার ও সর্বোচ্চ আদালত তো বটেই, রাষ্ট্রপুঞ্জেরও মাথাব্যথার কারণ। রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় জানিয়েছিল, ভারতে প্রতি বছর যত মহিলার অকালমৃত্যু ঘটে তার ৪০-৫০ শতাংশই আসলে পণের দাবিতে হত্যা।
তাই কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর গায়ে আত্মহত্যা, খুন বা দুর্ঘটনার তকমা লাগিয়ে দেওয়ার আগে খুব ভালো করে তদন্ত করে নিশ্চিত হতে হবে যে মহিলার উপর পণের দাবিতে কোনও অত্যাচার করা হত না। যে কোনও মামলা চলাকালীন সব পক্ষকেই সমান সুযোগ দিতে বাধ্য থাকবে প্রশাসন ও আদালত।