জীবন এখন অনেকটাই হোয়াটসঅ্যাপ নির্ভর! ব্যক্তিগত কথা থেকে কাজের কথা, বেশিরভাগটাই চলে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। এমনকী, করোনাকালের সুবাদে ওয়ার্ক ফ্রম হোম চালু হওয়ার আগে থেকেই অফিশিয়াল কথাবার্তাও চলত হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে, সে ব্যবহার ক্রমশই বেড়েছে। এখন প্রতি কথায় ইমেল না করে অফিসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমেই জরুরি কথাবার্তা, মিটিং সেরে নেন কর্মীরা। স্বাভাবিকভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করতে গিয়ে সে সব কথাবার্তার একটা বড় অংশ জুড়ে ঢুকে পড়েছে ইমোটাইকন বা ইমোজি! হাত জোড় () করে ধন্যবাদ জানানো, অথবা সহকর্মীর কাজের প্রশংসা করতে গিয়ে হাততালি (
) চিহ্ন বা হাই ফাইভ (
) তো দেদার চলছে আজকাল। একটা অলিখিত স্বীকৃতিও জুটে গেছে এ সব আইকনের। সফল কমিউনিকেশন তৈরি করা থেকে শুরু করে টিমস্পিরিট গড়ে তোলা, কর্মদক্ষতা বাড়ানোর মতো বিষয়ে এ সব ইমোজির ব্যবহার অনেকটাই সফল, এ কথা স্বীকার করেন তাবড় ম্যানেজারেরাও।
কিন্তু এর উল্টোদিকটাও সত্যি! ইমোজি ব্যবহার করলেই হয় না, তার জন্য গভীর দায়িত্ববোধও থাকতে হয়। শুধু অফিশিয়াল কথোপকথনের সময়ই নয়, ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সময়ও আপনি কোন ইমোজি ব্যবহার করতে পারেন আত কোনটা পারেন না, তা না জানলে যখন তখন বিপদে পড়ার আশঙ্কা! ঠিক যেমন মনের ভাব আপনি যেমন খুশি যেখানে সেখানে প্রকাশ করতে পারেন না, ইমোজি ব্যবহারের সময়ও সে কথা মাথায় রাখতে হবে আর তার জন্য ইমোজির অর্থও জানা থাকতে হবে।
হরির লুটের মতো ইমোজি ছড়ানোর আগে মাথায় রাখুন কাকে পাঠাচ্ছেন! যেমন ধরুন, কিসিং ফেস () বা হার্ট আইজ (
) ভালোবাসার চিহ্ন বোঝায়। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে এ সব চালাচালি করতেই পারেন, কিন্তু অফিসের সহকর্মীকে পাঠিয়ে ফেললে হ্যারাসমেন্টের দায় নেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন! আবার পাত্রের মতোই স্থানকালও খুব জরুরি। যেমন ধরুন, হালকা হাসির যে ইমোজি (
) আমাদের দেশে বড্ড নিরীহ আর আনন্দের চিহ্ন, চিনে কিন্তু সেটাই আবার সন্দেহ প্রকাশ করে! এঞ্জেল ইমোজি (
) বলতে আমরা বুঝি শান্তি বা প্রশংসা। কোনও কোনও পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে কিন্তু এটি মৃত্যু চিহ্ন, মানে প্রাপক মনে করতেই পারেন আপনি তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছেন! আবার বেগুন, আপেল বা চেরির মতো ফলের ছবি সরাসরি যৌনতার ইঙ্গিতবাহী। তাই এ সব চিহ্ন কাউকে পাঠানোর আগে সাধু সাবধান!
তা হলে কীভাবে মেনে চলবেন ইমোজি এটিকেট? প্রথমত ভেবেচিন্তে ইমোজি ব্যবহার করুন, প্রতি কথায় একটা করে ছবি সেঁটে দেবেন না। তাতে গোটা বক্তব্যটার গুরুত্ব নষ্ট হয়, দেখতেও বিরক্ত লাগে। আর হ্যাঁ, নেট ঘেঁটে কোন ইমোজির কী মানে, সেটা জেনে নিতে পারলে মন্দ হয় না!
কোনও ইমোজির অর্থ নিয়ে সংশয় থাকলে ব্যবহার করবেন না। বরং সম্পূর্ণ বাক্য লিখে দিন, তাতে দু’পক্ষই স্বচ্ছ থাকবেন।
সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে কথা বলার সময়, কোনও কিছু নিয়ে তর্ক বা মতানৈক্য চলাকালীন ইমোজি ব্যবহার একদম চলবে না। না হলে আপনার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হতে পারে।
যে কোনও ইমোজি পাঠানোর আগে প্রাপকের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের কথা মাথায় রাখুন। বন্ধুকে যে ইমোজি পাঠানো যায়, ক্লায়েন্ট বা বসকে তা পাঠানো যায় না। এটা বুঝে নিলেই বাকি কাজটা সহজ হয়ে যাবে। আর সংশয়ে পড়লে কী করবেন, তা তো আগেই বলেছি!
বুদ্ধি খাটিয়ে ইমোজি ব্যবহার করুন, পালটে দিন কথাবার্তার রং!