গোটা ইউরোপ আর আমেরিকায় খুব দ্রুত কমছে করোনা ভাইরাসের দাপট। বেশিরভাগ ধনী দেশেই টিকাকরণের হার খুব ভালো। সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা ফিরছে চেনা ছন্দে – খুলছে রেস্তোরাঁ, দোকানপাট। ফরাসি ওপেন টেনিস চলছে এখন, এর পরেই উইম্বলডনের আসর বসবে। পাশাপাশি ইউরোপের বেশ কয়েকটা শহর জুড়ে খেলা হবে বিশ্বকাপ ফুটবল। সেই খেলা দেখতে পর্যটকরা আসবেন, স্পেন আর গ্রিসও প্রমোদভ্রমণের জন্য দরজা খুলেই দিয়েছে।
পাশাপাশি ভ্যাকসিনেশন হয়ে গেলে আর মাস্ক পরার দরকার নেই, এমন একটা ধারণাও বদ্ধমূল হচ্ছে ক্রমশ। আমেরিকায় সরকার অবশ্য বলেই দিয়েছে যে, টিকার দু’টি ডোজ নেওয়া হয়ে গেলে মাস্ক না পরলেও চলবে। সেই আনন্দেই রাস্তায়-ঘাটে, সমুদ্রতটে, রেস্তোরাঁয় মাস্কহীন মানুষজন ফের ভিড় জমাচ্ছেন, চলছে আমোদ-হুল্লোড়।
আর এই জায়গায় দাঁড়িয়েই প্রমাদ গুনতে আরম্ভ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনাকে হারিয়ে দেওয়া গিয়েছে ভেবে নিশ্চিন্ত হলে যে কী হতে পারে, তা নিয়ে একটা আশঙ্কা ক্রমশ দানা বাঁধছে। এখনও বহু মানুষ প্রতিষেধকের আওতায় আসেননি, প্রতিষেধকের নিরাপত্তার বেড়াজাল কতটা দুর্ভেদ্য, তাও প্রমাণিত হয়নি। এই অবস্থায় মাস্ক আর সোশাল ডিসট্যান্সিং না মেনে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করলে আবার আগের মতো বিপদ হবে না তো? এ সব প্রশ্নের উত্তর এখনই চট করে দেওয়া সম্ভব নয়, অপেক্ষা করতে হবে।
এক শ্রেণির ডাক্তারের ধারণা, হার্ড ইমিউনিটি বা টিকার সুরক্ষা সম্পর্কে যে যে ধারণা আমরা করেছি, তার অনেকটাই আগের সমস্ত ভাইরাসের নিরিখে করা। করোনা ভাইরাস কিন্তু সেগুলির চাইতে বেশ আলাদা – তাই এখনই নিশ্চিত হওয়াটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। বিশেষ করে পুরো দুনিয়ায় সম্পূর্ণ টিকাকরণের কাজ শেষ হতে অনেক দেরি। এখনও তো বাচ্চা আর কিশোর-কিশোরীদের টিকা দেওয়ার কাজ শুরুই হয়নি!
ভারতে সংক্রমণ কমলেও ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার মতো লাতিন আমেরিকার বহু দেশে করোনা এখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেখানে টিকাকরণের হারও কম। আফ্রিকার অনেক দেশে কাজ শুরুই করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াটা খুব ভুল হবে।
কিছু মানুষের টিকাকরণ হয়েছে, আর অনেকের হয়নি — এই পরিস্থিতিটা ভাইরাসের মিউটেশন হওয়ার জন্য একেবারে আদর্শ। সে টিকে থাকার জন্য নিজের জেনেটিক গঠনে আরও জটিল কোনও পরিবর্তন আনবে। এমনও হতে পারে যে সেই মিউটেশনের সামনে হয়তো ভ্যাকসিনের নিরাপত্তাও ভেঙে পড়ল!
তাই এখনই মাস্ক ছাড়বেন না, হাত ধুতে ভুলবেন না। মানুন সামাজিক দূরত্ববিধি। একজন মানুষ টিকার আওতার বাইরে থাকলেও আপনি নিরাপদ নন – এ কথা মনে রাখবেন।