ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানিতে ক্রমশ চড়া হচ্ছে কোভিড বিধিবিরোধী আন্দোলনের আঁচ, ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ছে ইউরোপের অন্যত্র। আমেরিকাও কিন্তু খুব পিছিয়ে থাকবে না – সেখানেও যাঁরা টিকা নিয়েছেন এবং যাঁরা নেননি, তাঁদের মধ্যে নিরন্তর ঝামেলা চলছে।
জার্মানি
জার্মানিতে রবিবার ১ আগস্ট সরকারি অনুশাসনের তোয়াক্কা না করেই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ জানাতে জমা হয়েছিল ভিড় – আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল যে তাঁরা সরকারের লাগু করা ‘ভ্যাকসিন পাস’ মেনে নেবেন না। ভিড় বার্লিনের ব্রান্ডেনবার্গ গেটের দিকে যাচ্ছিল, পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার জন্য লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। ৬০০ জন গ্রেফতার হন, ধস্তাধস্তিতে আহত হন অনেকে। পরে পুলিশি হেফাজতে একজন মারা গিয়েছেন বলে খবর করেছে euronews.com।
এই ঘটনার পর থেকে জার্মানিতে লকডাউন-বিরোধী আন্দোলন আরও গতি পেয়েছে। আন্দোলনের যাঁরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের বেশ কিছুদিন ধরেই কড়া নজরদারিতে রেখেছে সরকার। তাতেও বিক্ষোভ ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
এত অশান্তির সূত্রপাত কীভাবে হল? মে মাস থেকে জার্মানিতে ক্রমশ কোভিড বিধি শিথিল করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হচ্ছে হোটেল, রেস্তোরাঁ, বার। কিন্তু সেখানে প্রবেশ করতে গেলে হয় ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট লাগবে, নয়তো দাখিল করতে হবে কোভিড ১৯ থেকে সেরে ওঠার প্রমাণ অথবা নেগেটিভ রিপোর্ট।
কিন্তু অনেকেই আছেন যাঁরা ভ্যাকসিনের বিরোধিতা করছেন, বা কোভিডের অস্তিত্ব মানতে চাইছেন না, অথবা গোটা বিপর্যয়কে সরকারের চাল বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি অতি ডান-ঘেঁষা মতবাদ পোষণ করেন যাঁরা, তাঁদেরও ধারণা এসব নিয়ম লাগু করে মানুষের মধ্যে বিভেদ বাড়াতে চাইছে সরকার।
ফ্রান্স
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের রাস্তায় নেমে পড়েছে আন্দোলনকারীদের ঢল, তাঁরা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ-র ভ্যাকসিন নীতির বিরোধিতায় স্বর চড়াচ্ছেন। এঁদের ধারণা হয়েছে যে, টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করে মাকরঁ আসলে স্বাধীনতা বিরোধী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ‘মাকরঁ স্বৈরাচারী’ ‘ওষুধ কোম্পানি ছিনিয়ে নিচ্ছে স্বাধীনতা’ প্ল্যাকার্ড হাতে শয়ে শয়ে মানুষ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, অনেকেই মাস্ক পরছেন না। পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে পুলিশকে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের সাহায্য নিয়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা যাক, এ মাস থেকে প্যারিসের সিনেমাহল বা রেস্তোরাঁ খুলে গিয়েছে। তবে প্রবেশের আগে সেখানেও ভ্যাকসিন পাস দেখাতে হবে। সেখানকার বাসিন্দাদের ধারণা, মাকরঁ তাঁদের স্বাধীনতা খর্ব করার চক্রান্ত করছেন।
লন্ডন
আলজাজিরা ওয়েবসাইটের মতে, ইংল্যান্ডের বহু বাসিন্দা মনে করেন যে সরকারের ট্র্যাক অ্যান্ড টেস্ট অ্যাপ তাঁদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে। মাঝে মাঝেই মোবাইলে বার্তা আসছে, আইসোলেশনে চলে যেতে হচ্ছে যখন তখন। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ৯০ ভাগ কর্মী একসঙ্গে আইসোলেশনের বার্তা পেয়েছেন, এমনও হয়েছে। এভাবে জীবনধারণ করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়া
মেলবোর্ন-সিডনিতেও ঘনিয়ে উঠছে অশান্তির কালো মেঘ। অস্ট্রেলিয়ায় সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু মানুষ অত বিধিনিষেধ মেনে চলতে নারাজ।
ইতালি
সরকারের জারি করা ‘গ্রিন পাস’ নিয়ে চলাফেরা করতে রাজি নন এক শ্রেণির নাগরিক। রোম, তুরিন, নেপলস-এ তা নিয়ে নিয়মিত আন্দোলন চলছে।
. পাশাপাশি বহু মানুষ এই ধরনের জমায়েতের বিরুদ্ধে। তাঁদের ধারণা, কিছু হাতে গোনা বিক্ষোভকারীর বোকামির মাসুল গুনতে হবে অনেক বেশি সংখ্যক নাগরিককে।
. ভ্যাকসিন নেওয়ার সঙ্গে স্বাধীনতার কোনও বিরোধ নেই। উলটে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হলে অন্য এক স্বাধীনতার আস্বাদ মিলবে।
. কোভিডের প্রসার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য লকডাউন অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি। তাই যেখানে রোগীর সংখ্যা বাড়বে, সেখানেই সাধারণ মানুষের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ লাগু হবেই।
. ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের কারণে ভ্যাকসিনেশনের পরেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই অবস্থায় সব বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া যাবে না।
. সরকারের মূল উদ্দেশ্য নাগরিকের সুস্থতা নিশ্চিত করা, ভাইরাসের গতি ঠেকানো।