ভারতে এখন কোভিডের সেকেন্ড ওয়েভের ধাক্কা ক্রমশ থিতিয়ে আসছে, আর নেপালে মাথা তুলছে দ্বিতীয় ঢেউ। সেই সঙ্গে এখন সে দেশে পর্বতারোহণ-পর্যটনের পুরো মরশুম চলছে। সামনের সপ্তাহেই এ বারের মতো মরশুম শেষ, তাই বহু পর্বতারোহী আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এভারেস্টের মাথায় বিজয় পতাকা রোপন করে আসতে চান।
আর সেই সুযোগেই বেস ক্যাম্পে সেঁধিয়ে গিয়েছে করোনা ভাইরাস – প্রায় ১০০ জন করোনা আক্রান্তের খবর মিলেছে বেসরকারি সূত্রে। বেস ক্যাম্প এবং আরও উপরের নানা ক্যাম্প থেকে এয়ারলিফট করে নামিয়ে আনা হয়েছে বেশ কয়েকজন শেরপা ও পর্বতারোহীকে, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা যথেষ্ট শঙ্কাজনক। সমস্যা হচ্ছে, নেপাল সরকার এখনও কোনও আক্রান্তের কথা স্বীকার করতে চাইছে না।
গত বছর নেপালে করোনা ভাইরাসের কারণেই পর্বতারোহণ বন্ধ রাখা হয়েছিল, তার ফলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্টো দেশটি। এ বছর নেপাল সব আন্তর্জাতিক আশঙ্কা হাওয়ায় উড়িয়ে ফের এভারেস্ট অভিযানের রাস্তা খুলে দেয়। ৪০০-র বেশি বিদেশি পর্যটক নাম লেখান স্রেফ এভারেস্ট অভিযানে।
এভারেস্টে তো আর সটান উঠে পড়া যায় না, নেপালে এসে কিছুদিন থাকতে হয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য। তার পর বেস ক্যাম্পে থাকতে হয় পর্বতারোহণের আগে – আবহাওয়া ভালো থাকলে এবং ধীরে ধীরে পথ চলা শুরু হয়। এবারে আবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কোয়ারেন্টাইন পর্ব – নেপালে এসে নিভৃতবাসে থাকার সময়েই বিদেশিরা নিয়ম মানেননি, এমন অভিযোগ উঠছিল।
তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, হাই অল্টিটিউডে কাশি, মাথা ধরা, হাঁফ লাগার মতো নানা সমস্যা হতেই থাকে, তার গোড়ার দিকে এই লক্ষণগুলিকে তেমন আমল দেওয়া হয়ওনি। ফলে রোগ ছড়িয়েছে বেস ক্যাম্পের ঠাসাঠাসি ভিড় তাঁবুগুলির মধ্যে। সেখানে সোশাল ডিসট্যান্সিং মানাও হয়নি।
একাধিক বিদেশি মাউন্টেনিয়ারিং সংস্থা এবারের মতো অভিযান বাতিল বলে ঘোষণা করে তাদের সঙ্গে রেজিস্টার করা সব পর্বতারোহীকে নিরাপদে বাড়ি ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিছু সংস্থার হঠকারিতার জন্য এখনও শৃঙ্গের দিকে বহু মানুষের ভিড় আছে – অভিযাত্রী ও তাঁদের গাইডদের টার্গেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিখর জয় করে নিচে নেমে আসা। চূড়ার কাছাকাছি ভিড় থাকলে বেশ খানিক সময় অপেক্ষা করতে হয়, তাতে শরীরের তাপমাত্রা আরও নেমে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
অস্ট্রিয়ার পর্বতারোহী লুকাস ফারটেনবাখের তত্ত্বাবধানে প্রতি বছর অজস্র উৎসাহী এভারেস্টে চড়েন – তিনি তাঁর এবারের কার্যক্রম বাতিল করে নেমে এসেছেন কাঠমান্ডুতে। যেহেতু সরকারের তরফে এখনও কোনও সংক্রমণের ঘোষণা নেই, ফারটেনবাখ নিজের দায়িত্বে রেসকিউ পাইলট, ডাক্তার, স্বাস্থ্য বিমা কোম্পানিদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন – ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকাকেকে তিনি বলেছেন, আনুমানিক শ’ দুয়েক পর্বতারোহী ও গাইড আক্রান্ত হয়েছেন কোভিডে।
সমস্যা হচ্ছে, নেপালের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো এমনিতেই দুর্বল। তার উপর পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে যদি কোভিড ছড়িয়ে পড়ে কিছু মানুষের লোভ আর হঠকারিতার কারণে, তা হলে আফসোসের সীমা থাকবে না। বিদেশ থেকে যে সব অভিযাত্রী হিমালয়ের টানে প্রতিবার ছুটে আসেন এই ছোট্টো পাহাড়ি দেশে, তাঁরা পরিস্থিতিতে রীতিমতো উদ্বিগ্ন।