এডওয়ার্ড স্নোডেন সেই কোন ২০১৪ সালে আমেরিকার সিকিউরিটি এজেন্সিগুলোর দিকে আঙুল তুলেছিলেন। বলেছিলেন যে তারা বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতে রেখেছে – কোনও মানুষই কড়া নজরদারির আওতার বাইরে নেই – তখন কেউই কি আর গা করেছি খুব? মনে হয়েছে ওসব থেকে আমরা বহু দূরে আছি।
মুখ খোলার পর স্নোডেন প্রাণ বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছেন, দেশছাড়া হয়েছেন, কিন্তু তাঁর বলা সত্যিটা বদলায়নি। ক্রমশ আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের প্রতিটি ই-মেল, ফোন কল, সোশাল মিডিয়া পোস্ট – সবের উপরেই নজরদারি চলছে। উপগ্রহ চিত্র বলে দিতে পারে আমাদের যে কারও অবস্থান — আমরা প্রত্যেকে আসলে একটা নম্বর, সেই নম্বরের সঙ্গে যোগ আছে আমাদের ফোনের, ব্যাঙ্কে জমা রাখা টাকার, বাড়ির ঠিকানার, শারীরিক অবস্থার! এর পর আর কী লাগে?
রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বলয় নিশ্ছিদ্র করার জন্য যে অতন্দ্র প্রহরীর মতো নজরদারি চালানো প্রয়োজন, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিজীবনে ঢুকে পড়েছে নজরদারের কড়া দৃষ্টি। আপনার বাড়িতে ঢোকার গলির মুখে বসানো আছে সিসিটিভি ক্যামেরা, রাস্তার মোড়ে, ট্র্যাফিক সিগনালে, বাচ্চার ক্লাসে সর্বত্র ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার উপস্থিতি। বাড়িতেও নিস্তার নেই – বাচ্চার ঘরে কী হচ্ছে বোঝার জন্য অনেক মা-বাবাই সিসি টিভি ক্যামেরা বসিয়ে রাখেন।
নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা যত বাড়বে, তত বাড়বে নজরদারিও। আর আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সে কাজ আরও সুস্থভাবে করা সম্ভব। মোবাইল ফোন ছাড়া আজ আমাদের কারও চলে না, তাই পেগাসাসের মতো সফটওয়্যারের নির্মাণ হয় – যা খুব সহজেই আপনার প্রতিটি মুহূর্তের খবরাখবর পাচার করতে পারে আগ্রহী সংস্থা বা ব্যক্তির কাছে।
এই যে সর্বক্ষণ নানা জায়গায় আমাদের ডেটা বা তথ্য জোগাতে হচ্ছে, তার একটা ভালো দিকও আছে কিন্তু! রাজস্থানের কোন গ্রামের ইশকুলে ছাত্রদের বসার চেয়ার নেই, বিহারের কোথায় না খেতে পেয়ে কতজন মারা যাচ্ছেন, সেটা রাষ্ট্র ঝটপট জেনে ফেলছে। সেইমতো ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঠেকিয়ে দেওয়া যাচ্ছে সন্ত্রাসবাদী হানা, নারী বা শিশু পাচার।
আবার এই তথ্যভান্ডার হ্যাক করে প্রকাশ্য বাজারে বিকিয়ে যাচ্ছে আপনার একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য। যে ডেটার সাহায্যে উন্নয়ন হয়, সেই ডেটাই আপনার একান্ত ব্যক্তিগত দুনিয়াকেও হাটে নামিয়ে দেয়! কিন্তু কিছু করারও নেই – এখান থেকে পিছিয়ে আসার আর কোনও উপায় নেই!
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ – সে বিতর্কের নিষ্পত্তি বোধ হয় কোনও কালেই হবে না!