ভারতে নকল চাকরির টোপ দিয়ে প্রতারণা করার ব্যবসা চালু ছিল বহুদিন থেকেই, লকডাউনের পর তার আকার আরও অনেকটাই বেড়েছে। নিধি রাজদানের মতো পোড়খাওয়া সাংবাদিক সামনে এসে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লোকলজ্জার ভয়ে প্রতারিত হওয়ার কথা কেউ স্বীকার করেন না – তাই প্রতারকের ব্যবসার আকার বাড়তেই থাকে।
যদি স্রেফ গত কয়েক মাসের খতিয়ানের দিকে চোখ রাখেন, তা হলেই জানতে পারবেন যে ২০২১-এর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই দিল্লি থেকে ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এক প্রাক্তন কর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এমন একটি র্যাকেট চালানোর অপরাধে। ২০২০-র ডিসেম্বরে ওড়িশার এক এমএলএ-র নাম প্রকাশ্যে আসে, তিনিও চাকরি দেওয়ার নাম করে বহু মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছেন।
আজকাল যেহেতু প্রায় সব ইন্টারভিউ অনলাইন হচ্ছে, তাই গোড়ায় চট করে এই সব নকল সংস্থাগুলিকে সন্দেহ করেন না চাকরিপ্রার্থীরা। কিন্তু কয়েকটি লক্ষণ আছে, যা দেখেই ফেক অফারগুলিকে চিনে নেওয়া যায়। জানতে চান সেগুলি কী?
১. কেউ কি আগ বাড়িয়ে চাকরির অফার দিচ্ছেন?
সন্দেহের প্রথম কারণ এটাই। আপনি খুব যোগ্য প্রার্থী হলেও আগ বাড়িয়ে আসা চাকরির অফার নিয়ে একটু সতর্ক থাকুন – সাধারণত এগুলি মিথ্যে হয়। খুব বিশ্বস্ত কারও কাছ থেকে অফার এলে অবশ্য আলাদা কথা। অনেক সময়ে ফোনে ভেসে আসে এই ধরনের বার্তা – একটিমাত্র এসএমএস খুলে দিতে পারে ইন্টারভিউয়ের দরজা, এমন দাবি করা হয়। ভুলেও এদের শেয়ার করা লিঙ্ক খুলবেন না, মিসড কল দেবেন না নম্বরে।
২. সামান্য টোকেন মানি বা কোনও ডিমান্ড ড্রাফটের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলা হচ্ছে?
কোনও নিয়োগকর্তার উদ্দেশ্য সৎ হলে তিনি এমন করবেন না। হয়তো বলা হবে, আপনি কতটা ইচ্ছুক তার প্রমাণ দিতে নির্দিষ্ট অ্যামাউন্টের টাকা জমা করুন। করবেন না – এভাবে আজ পর্যন্ত কোনও নিয়োগ হয়নি। সবটাই প্রতারকের চাল।
৩. কেউ খুব সামান্য কাজের বিনিময়ে বিরাট টাকা মাইনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?
এমন একটা আজগুবি ব্যাপার বাস্তবে সম্ভব নয়। অনেক সময়ে আবার দেখা যায়, প্রার্থীর কাছ থেকে বিশেষ কোনও দক্ষতাও আশা করেন না নিয়োগকর্তা। জেনে রাখবেন, এমন ৯৯ শতাংশ অসামান্য অফারই জাল বলে প্রতিপন্ন হয় শেষে।
৪. অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর নিয়োগকর্তা আচমকা বিপদে পড়ে টাকা চাইছেন?
পত্রপাঠ পুলিশে যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পর্যন্ত আসার আগে কিছু বোঝা যায় না। নামী কোনও হোটেলে ডেকে ইন্টারভিউ হয়, নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া যায়। তার পর আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন নিয়োগকর্তা বা তাঁর পরিবারের কেউ, দু-তিনদিনের জন্য টাকার ব্যবস্থা করে দিতে বলা হয়। এসব ফাঁদে পা দেবেন না।
৫. সতর্ক থাকুন পিশিং ই-মেল থেকে
অফিশিয়াল দেখতে কোনও আইডি থেকে ব্যক্তিগত মেল এলেও সতর্ক থাকুন। হয়তো আপনি চাকরি খুঁজছেন না, কিন্তু যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, সেখানকার কোনও বসের নাম করা কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা বা ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে মেল এলে আগে এইচআরকে জানান।
কী করবেন
. অ্যান্টিভাইরাস আপডেটেড রাখুন, কোনও লিঙ্কে ক্লিক করে সন্দেহজনক সূত্র থেকে আসা অ্যান্টিভাইরাস ডাউনলোড করবেন না।
. সহজ পাসওয়ার্ড রাখবেন না, পাসওয়ার্ড নিয়মিত বদলে ফেলার অভ্যেস তৈরি করুন।
. কোনও পোর্টালে চাকরি খোঁজার সময়েও সাবধানে থাকুন, সংস্থার খুঁটিনাটি ভালো করে জেনে তবেই এগোন।