প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার মানুষের সাধের সভ্যতাকেই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পেট্রোলিয়াম আর কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার বাড়াচ্ছে বাতাসে কার্বন কণার পরিমাণ, দূষিত বায়ু নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস। সেই সঙ্গে বাড়ছে গোটা পৃথিবীর তাপমাত্রা।
সেই সঙ্গে গলছে হিমবাহ। কমছে মিষ্টি জলের পরিমাণ। প্রচুর জলের অপচয় হয় বড়ো শহরগুলিতে, সেটাও এখনই বন্ধ করা উচিত। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে কিছুদিন আগেই ভয়ঙ্কর জলের কষ্ট গিয়েছে। চেন্নাইয়ে এক গ্রীষ্ম আগেই জলের জন্য হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছিল। তাই জলের প্রতিটি ফোঁটা হিসেব করে খরচ করাই উচিত।
দিনে কতটা জল খরচ করেন আপনি তার হিসেব রাখুন: খুব সচেতনভাবে হিসেব রাখুন আপনি সারাদিনে কতটা জল খরচ করেন। পুরো পরিবারের প্রয়োজনে কতটা জল খরচ হয়, সেটাও জানা উচিত। তার পর হিসেব করতে হবে তার কতটা কমানো যায়।
অহেতুক কল খুল রাখবেন না: মুখ ধোওয়া, ব্রাশ করা, বাসন মাজা বা রোজের কাপড় ধোওয়ার মতো কোনও কাজের সময়েই আগে থেকে কল খুলে রেখে দেবেন না। ঠিক যতটুকু প্রয়োজন, ততক্ষণ সময় কল খুলুন। মগ বা বালতি ভরে নিন। তারপর সেই ধরে রাখা জলে প্রয়োজনীয় কাজ সারুন। জানেন, স্রেফ কল খুলে রেখে ব্রাশ করার বদভ্যেস থেকে মুক্তি পেলে আপনি দৈনিক অন্তত 10 লিটার জলের অপচয় ঠেকাতে পারবেন?
অল্প করে কাপড় কাচা বা বাসন মাজার অভ্যেস ছাড়ুন: একসঙ্গে বেশি করে কাপড় ভিজিয়ে রেখে ফুল লোডে ওয়াশিং মেশিন চালান। এঁটো বাসন মাজার আগে এক বালতি জলে ভালো করে ধুয়ে নিন সব ময়লা। তার পর মেজে আর একবার ধুয়ে নিলেই হবে। দফায় দফায় এ কাজ করলে অনেক বেশি জল খরচ হবে।
শাওয়ারে স্নান করবেন না, বালতি ব্যবহার করুন: শাওয়ারে স্নান করতে মজা লাগে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু জলের অপচয় রুখতে চাইলে বালতি ব্যবহার করতে হবে। এমনকী যদি আপনি ফ্লাশের বদলে বালতিতে জল ভরে নিয়ে কমোডে ঢালতে পারেন, তা হলে দৈনিক অন্তত 20 লিটার জল বাঁচাতে পারবেন।
গাছে জল দিন ভোরে অথবা বিকেলে: চড়া রোদ থাকাকালীন গাছে জল দিলেই জল বেশি বাষ্পীভূত হবে। তাই ভোরবেলা আর বিকেলে রোদ পড়লে গাছে জল দিন। চাল ধোওয়া বা সবজি ধোওয়া জলও গাছে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন।
গাড়ি ধোওয়ার সময় হোস পাইপ নয়, ব্যবহার করুন বালতি-ওয়াশক্লথ: হোস পাইপ দিয়ে গাড়ি ধুলে জলের প্রচন্ড অপচয় হয়। সে তুলনায় সাবান-ওয়াশক্লথ আর বালতি ভরা জল দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করুন। তাতে বাঁচাতে পারবেন অন্ততপক্ষে 30 লিটার জল।
শিখে রাখুন প্লাম্বিংয়ের টুকিটাকি: কল থেকে সরু সুতোর মতো বা ফোঁটা ফোঁটা করে জল পড়ে গেলেও বিরাট অপচয় হয়, আর সেটা অনেক সময়েই আমরা বুঝতে পারি না। তাই কল থেকে জল চুঁইয়ে পড়াটা আটকাতেই হবে। ছোটখাটো মেরামতির জিনিসপত্র বাড়িতেই রাখুন। নিজেরা অন্তত কল থেকে জল বয়ে যাওয়াটা আটকানোর কায়দাটা শিখে ফেললে ভালো করবেন। রাস্তার কল থেকে জল পড়ে যেতে দেখলে তা বন্ধ করুন, মানুষকে সচেতন করে তোলার দায়িত্বটা আপনাকেই নিতে হবে।
খাবার নষ্ট করবেন না: মনে রাখবেন, খাবার তৈরিতে প্রচুর জল ব্যয় হয়। তাই খাবার নষ্ট করাটা বন্ধ করতে পারলে খুব ভালো হয়। পারলে নিরামিষ খান বেশি করে, আমিষের উৎপাদনে বেশি জলের প্রয়োজন হয়।
বোতলের জল ব্যবহার করা কমান: বোতলের জল ব্যবহার করা মানে আপনি প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়াচ্ছেন। একটি জলের বোতল তৈরি ও প্রক্রিয়াকরণে কতটা জল ব্যয় হয়, তা জানেন? তার চেয়ে বেশ কয়েকটি নানা আকারের বোতল কিনে রাখুন হাতের কাছে।
প্রয়োজন না হলে নতুন পোশাক কিনবেন না: পোশাক নির্মাণ সংস্থায় প্রচুর জলের খরচ হয়। তাই রোজ নতুন জামাকাপড় কেনার বাতিক থাকলে নিজের মন সংযত করুন।