সারা দেশে কোভিড সংক্রমণের হার কমলেও সরকারকে চিন্তায় রেখেছে মোট আটটি রাজ্য, তার ৬০ শতাংশই আবার উত্তর-পূর্ব ভারতে। রাজ্যগুলি হল সিকিম, ওড়িশা, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, অরুণাচল প্রদেশ, ত্রিপুরা এবং কেরালা।
সমস্যা এবং চিন্তার বিষয় হচ্ছে, সিকিম আর ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গের একেবারে গা ঘেঁষা রাজ্য, সারাক্ষণ মানুষের যাতায়াত চলছে। এই দু’টি রাজ্য ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্যত্র এখনই সংক্রমণে রাশ টানতে হবে। তা না হলে এখানেও যে কোনওদিন অ্যাকটিভ কেসের সংখ্যা বাড়তে আরম্ভ করবে।
তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, যত বিধিনিষেধ কমছে, তত বাড়ছে রিভেঞ্জ ট্যুরিজম। স্বাস্থ্য মন্ত্রক তা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন। ছাড় পেতে না পেতেই কোভিডকালীন কড়াকড়ি তুড়ি মেরে উড়িয়ে হাজারে হাজারে মানুষ বেড়াতে বেড়িয়ে পড়ছে। স্রেফ জুন মাসে অন্ততপক্ষে ৭০ হাজার পর্যটক হিমাচলপ্রদেশে বেড়াতে গিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছেও পুরী এবং সিকিম-উত্তরবঙ্গ-ডুয়ার্সের আকর্ষণ অদম্য। সমস্ত বিধিনিষেধ উঠে গেলেই সেখানেও ভিড় হবে। তা ছাড়া সামনে পুজোর ছুটি আছে – এবারও সর্বত্র কিছু না কিছু কড়াকড়ি থাকবেই। ফলে মানুষ বাড়ির বাইরে পা রাখতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। ততদিনে ওড়িশা-সিকিমের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এখানে একটা উদাহরণ না দিলেই চলবে না। ইংল্যান্ডে চলাফেরা সংক্রান্ত কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার কথা ছিল গত মাসে, সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বরিস জনসন সরকার ১৯ জুলাই পর্যন্ত বিধিনিষেধ বহাল রাখে। এর মধ্যেই ইংল্যান্ডে বসেছে ইউরো কাপ ফুটবলের আসর। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল সিরিজ খেলতে ব্যস্ত।
এই অবস্থায় টিমের সাত সদস্য কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। পরবর্তী সিরিজ ইংল্যান্ড খেলবে পাকিস্তানের সঙ্গে – আনকোরা নতুন দল বাছাই করতে হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডকে। জানা গিয়েছে, সংক্রমণ কমায় টিম কোভিড বিধি মেনে চলায় গা ছাড়াভাব দেখিয়েছিল বলেই এই অবস্থা।
এই পরিস্থিতিতে এই আটটি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের উদ্দেশে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তাতে বলা হয়েছে –
. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করতে হবে।
. ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্টের কথা মাথায় রেখে জারি করতে হবে নির্দেশিকা, কোন কোন পদ্ধতি অনুসরণ করে সংক্রমণ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, তা জানাতে হবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে।
. সারা দেশে সংক্রমণ কমছে, তাই যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে নিয়মিতভাবে, সেই রাজ্যগুলির উপর বিশেষ নজরদারি বহাল রাখা হবে।
. অরুণাচল প্রদেশের মোট ২৫টি জেলার মধ্যে ১৯টিতেই বাড়ছে সংক্রমণের হার। অসমের ৩৩টি জেলার ২৯টিতে রোজ অন্তত ১০০ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেখানে খুব কড়া কনটেনমেন্টের বিধান দেওয়া হয়েছে। চলাফেরায় বিধিনিষেধ লাগু হলে সংক্রমণ খুব তাড়াতাড়ি কমিয়ে আনা সম্ভব, এ আগেও দেখা গিয়েছে।
. সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট-ভ্যাকসিনেশন ও কোভিড বিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার পরামর্শও দিয়েছেন রাজ্যগুলিকে।