অলিম্পিক এসে গিয়েছে একেবারে দোরগোড়ায়। ১৩৮তম ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি আয়োজিত এক আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত WHO প্রধান টেড্রস আদানোউম গেব্রেসিয়াস সেখানেই তাঁর শুনিয়েছেন আশার বাণী। তাঁর কথায় ফের সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছে বিশ্ববাসী।
ঠিক কী বক্তব্য রেখেছেন টেড্রস? বলেছেন, “এই অতিমারি কবে শেষ হবে, তা আমার কাছে প্রায়ই জানতে চান অনেকে। আমি খুব সহজ উত্তর দিই – পৃথিবী চাইলেই শেষ হবে এই অতিমারি। রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর অস্ত্র আমাদের হাতে রয়েছে, আমরাই জীবন বাঁচাতে পারি।”
আর সেটা কীভাবে সম্ভব? “প্রতিটি আক্রান্তকে খুঁজে বের করে আইসোলেট করতে হবে। তাঁর সংস্পর্শে কতজন এসেছেন, তার হিসেব রাখতে হবে – তাঁরা আক্রান্ত হলেন কিনা দেখা জরুরি। আর সেই সঙ্গে রোগীর দেখভাল করে তাঁকে সারিয়ে তুলতে হবে। নিজেরা খুব সাবধানে থাকুন। একমাত্র তা হলেই সংক্রমণের চেনটা ভাঙা সম্ভব।”
টেড্রসের বিশ্বাস, আগামী বছরের মাঝামাঝির মধ্যেই যদি গোটা পৃথিবীর সব দেশের ৭০% মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তা হলে অতিমারির সঙ্গে লড়াইয়ে মানুষ অনেকটা এগিয়ে যাবে। তবে অতিমারির তীব্রতার পাশাপাশি আরও একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা বাড়ছে – ধনীরা চিকিৎসার সব সুবিধে পাচ্ছেন, দরিদ্রদের এই মারণ রোগের সঙ্গে লড়াইয়ের রাস্তাটুকুও নেই। যত বেশিদিন এই অসাম্য থাকবে, ততদিন অতিমারিও থেকে যাবে।
এই অবস্থায় আমরা এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? ভারতের সাম্প্রতিক সেরো সার্ভে অনুযায়ী, এ দেশের অন্ততপক্ষে ৬৮% নাগরিকের একবার অন্তত কোভিডের সঙ্গে মোকাবিলা হয়েছে। সেকেন্ড ওয়েভের আগে সংখ্যাটা ৫০-এর কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছিল। এর পরে যদি আমরা কোভিড বিধি মেনে চলি এবং ভ্যাকসিনেশনের কাজে গতি আনা সম্ভব হয়, তা হলে থার্ড ওয়েভ খুব বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না হয়তো।
সমস্যা হচ্ছে, কোভিড বিধি মেনে চলা নিয়ে মানুষের স্বভাবেই মাঝে মধ্যে শৈথিল্য দেখা দেয়। টিকা নিয়েও এখনও অজস্র ভুল ধারণা ভেসে বেড়াচ্ছে বাতাসে, বহু মানুষ তা নিচ্ছেন না। ফলে নতুন ভ্যারিয়ান্টের আগমন ঘটতেই পারে। ভারতের জনসংখ্যা বিশাল, তাই মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হলেও তা ভয় ধরানোর মতো একটা সংখ্যা হয়ে দাঁড়াবে।
আপাতত মনে করা হচ্ছে যে, আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে থার্ড ওয়েভ আছড়ে পড়তে পারে। সম্ভবত কেরল আর মহারাষ্ট্রেই লক্ষণ দেখা দেবে সবার আগে। কিন্তু যে সব মডেলের আধারে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে, তার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না – অতিমারি যে কোনও মুহূর্তে গতিপথ বদলাতে পারে।
আমাদের ভরসা বলতে সেই মাস্ক, সামাজিক দূরত্ববিধি মানা, ভিড় থেকে দূরে থাকা, নিজেকে নিরাপদ রাখা। লকডাউন থাকুক বা না থাক, আপনাকে নিজের চারপাশের বেড়াটা শক্তপোক্ত করেই বাঁধতে হবে।