করোনা অতিমারির শুরু থেকেই আমরা শুনে এসেছি, একবার হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে গেলে এই ভাইরাস দাঁত-নখ হারাবে। প্রাকৃতিক নিয়মেই একটা সময়ে জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষের শরীর এই ভাইরাসের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাবে, তখন আর নতুন হোস্ট না পেয়ে জীবাণুটি গুরুত্ব হারাবে।
কিন্তু এই দ্বিতীয় ওয়েভের মাঝে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য তৃতীয় ওয়েভের কল্পনা করতে করতে আমরা সবাই যারপরনাই হতবুদ্ধি। কেউই বলতে পারছেন না জনগোষ্ঠীর অন্তত ৮০ শতাংশের সংক্রমিত হতে বা ভ্যাকসিন পেতে কতটা সময় লাগতে পারে। কিছু কিছু ডাক্তারের আন্দাজ, অন্তত গোটা পাঁচ-ছয় ওয়েভ এলে তবেই হয়তো হার্ড ইমিউনিটির কাছাকাছই পৌঁছনো সম্ভব।
ভারতের জন্সংখ্যার নিরিখে সংক্রমণ আর ভ্যাকসিনেশনের আওতায় এখনও পর্যন্ত এসেছেন মাত্র ৭-৮ শতাংশ মানুষ। অন্তত আরও দুই-আড়াই বছর রোজ সংক্রমণ আর টিকাকরণ চললে তবে হয়তো ৭০ শতাংশ ভারতীয় হার্ড ইমিউনিটির ধারে-কাছে পৌঁছবেন। কিন্তু এখানেও একটা বড়ো সমস্যা আছে – তা হল ভাইরাসের মিউটেশন।
খুব দ্রুত গতিতে করোনা ভাইরাসের আরএনএ-তে মিউটেশন হচ্ছে, এবং এই মিউটেটেড ভাইরাসের প্রভাবে একাধিকবার আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। একবার আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি থাকছে মাত্র কয়েকমাস – তারপর ইমিউনিটির বেড়াজাল ভেঙে নতুন কোনও স্ট্রেনের ভাইরাস কাবু করে ফেলছে। একটা ওয়েভ কমার পর যেই মানুষ ফের নিশ্চিন্তে মেলামেশা আরম্ভ করেছে এবং করোনা সুরক্ষাবিধিতে শিথিলতা এসেছে, সেই মুহূর্ত থেকে ফের মাথা চাড়া দিয়েছে মিউটেট করা ভাইরাস, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটা বারবার দেখা গিয়েছে।
ভ্যাকসিনের দু’টি ডোজ ঠিক কতদিন সুরক্ষা জোগাবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সংক্রমণ হলেও রোগ খুব জটিল জায়গায় পৌঁছচ্ছে না এটুকু প্রমাণিত হয়েছে – তা সংক্রমণ কমাতে পারে কিনা তা জানা নেই। কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো কোভিড ভ্যাকসিনও বছরে একবার নিতে হবে। তার উপর ভারতের মতো দেশে টিকা নেওয়া নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত আছে – সেটাও গণ-টিকাকরণ পদ্ধতির সাফল্যের পথে বাধা তৈরি করবে।
সব মিলিয়ে বুঝতেই পারছেন, আমাদের হাতে রইল পেনসিল! সোশাল ডিসট্যান্সিং মানুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন। আপাতত বেড়াতে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন না, বিশেষ করে সঙ্গে যদি বাচ্চা থাকে। কারণ বাচ্চাদেরও কোভিড হচ্ছে, আর তাদের চিকিৎসার পরিকাঠামো কিন্তু আরও খারাপ। মাস্ক পরুন, হাত ধুয়ে ফেলুন বারবার, অযথা নাকে-মুখে হাত দেবেন না। বাড়িতে থাকুন। যত তাড়াতাড়ি পারেন ভ্যাকসিন নিন।
প্যানিক করার মানে হয় না, কিন্তু তাই বলে অসতর্ক হওয়ার ভুলটাও করা উচিত নয়। জীবন একটাই – সেটাকে অহেতুক ঝুঁকি নিয়ে নষ্ট করার মানে নেই!