কিছুদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল এক হৃদয়বিদারক খবর – আফগানিস্তানের মেয়েদের জন্য গড়ে ওঠা একটি বোর্ডিং স্কুলের প্রধান স্কুলের দফতরে রাখা ছাত্রীদের সব নথিপত্র জ্বালিয়ে দিয়েছেন – যাতে বাড়ির মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর অপরাধে তাদের পরিবারের লোক তালিবানি অত্যাচারের শিকার না হয়।
কয়েকদিন আগে সেই প্রধান, শাবানা বাসিজ রাসিখ নিজেই টুইট করে জানিয়েছেন যে স্কুলের ২৫০জন ছাত্রী, শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন তিনি। যাওয়ার আগে পুড়িয়ে গিয়েছেন সব নথিপত্র, যাতে কেউ ছাত্রীদের পরিবারের কাউকে খুঁজে বের করতে না পারে। আপাতত তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন রোয়ান্ডায় – সামনের সপ্তাহের মধ্যে ক্লাস চালু করে দেওয়া হবে। মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হবে না কোনও মূল্যেই।
মেয়েদের জন্য প্রথম একটি বোর্ডিং স্কুল খুলছিলেন শাবানা বাসিজ রাসিখ। শাবানা নিজে যখন ছোটো ছিলেন, তখনও তাঁদের দেশে তালিবান রাজ কায়েম ছিল, তারা দেশ থেকে বিদায় নেওয়ার পরে তিনি নিজে লেখাপড়া শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। মেয়েদের লেখাপড়া শেখাটা যে কত জরুরি, তা তিনি হাড়ে হাড়ে জানেন।
গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, ২০০১ সালে যখন তালিবানরা ক্ষমতাসীন ছিল, তখন মাত্র ১২ শতাংশ আফগান মেয়ে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেতেন। ২০১৫-এ গণতান্ত্রিক আফগানিস্তানে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৫০%-এ। ২০ বছরে সে দেশের মেয়েদের যতটা অগ্রগতি হয়েছিল, তা এক লহমায় বদলে গিয়েছে। গত সপ্তাহেও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আফগান স্কুলছাত্রীদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, এখন তার সব বন্ধ। ৩১ তারিখে আমেরিকান সেনা দেশ ছাড়ার পর যে কী হবে জানা নেই।
এই পরিস্থিতিতে ছাত্রীদের বাড়ি পাঠানোর ঝুঁকি না নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শাবানা। এতজন মানুষকে, বিশেষত কিশোরী মেয়েদের নিরাপদে বের করে আনার কাজটা খুব কঠিন ছিল। আমেরিকান সেনার সহায়তায় প্রথমে তাঁরা কাতারে গিয়ে পৌঁছন। সেখান থেকে উড়ে গিয়েছেন রোয়ান্ডায়।
সেই সঙ্গে টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমরা পালিয়ে এলাম, কিন্তু অনেকেই পারল না। তাদের দিক থেকে এক মুহূর্তের জন্যও নজর সরাবেন না আপনারা। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আফগানিস্তানের দিকে লক্ষ রাখুন। আপনারা সতর্কভাবে পাহারা দিলে হয়তো মেয়েগুলোর উপর অত অত্যাচার হবে না। আফগানরা কিন্তু লড়াই ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমার ছাত্রীরাও দেবে আগামীদিনে। ততদিন আপনারা দায়িত্ব নিন। আমার আশা, পরিস্থিতি একটু ভালো হলেই আমরা দেশে ফিরতে পারব।’
সারা দুনিয়া থেকে শাবানার জন্য আসছে অজস্র শুভকামনা ও সাহায্য। বিপদের মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেখে যেভাবে তিনি সব দিক সামলেছেন, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।