মাঝে মাঝেই দেখবেন আপনার ফেসবুক ফিড বা হোয়াটসঅ্যাপে এমন কিছু খবর ভেসে ওঠে, যার শিরোনাম হতভম্ব করে দেওয়ার মতো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চমকে দেওয়ার মতো তথ্য পরিবেশন করা হয় – এগুলো ছড়িয়েও পড়ে বাতাসের গতিতে।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ইতালি মৃত কোভিড আক্রান্ত রোগীর শব ব্যবচ্ছেদ করে জেনেছে যে এই রোগ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে, আর সে ব্যাকটেরিয়া কোনও পরীক্ষাগারে তৈরি। ফলে করোনা ভাইরাসের গল্পটাই আসলে ধাপ্পা – এমন কোনও খবর চোখে পড়েছে? অথবা করোনা ভ্যাকসিন বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাই বহু দেশ তা বাতিল করেছে – এই শিরোনামে কোনও সংবাদ দেখেছেন? এগুলিই ভুয়ো সংবাদ বা ফেক নিউজের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
মিথ্যে খবর ছড়ানোর ইতিহাস কিন্তু বহু পুরোনো। আপনি মহাভারতের সেই বিখ্যাত ‘অশ্বত্থামা হত, ইতি গজ’-কেও ফেক নিউজই বলতে পারেন। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এ কাজ মানুষই করে এসেছে বরাবর, সোশাল মিডিয়া আসায় তা ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছে।
নির্বাচনের মরশুম চলছে, ছড়াচ্ছে করোনা ভাইরাস, ভোটের ফল কী হবে তা নিয়েও সাধারণ মানুষের আগ্রহের সীমা নেই। এই পরিস্থিতিতে ফেক নিউজ ছড়ানো সহজ এবং তার মাধ্যমে মানুষকে প্রভাবিত করা আরও সহজ।
তাই চোখ-কান খোলা রাখুন। কোনও সংবেদনশীল খবরের ফাঁদে পা দিয়ে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না। তার আগে খুব ভালো করে যাচাই করে নিন খবরটি সত্য কিনা। কীভাবে যাচাই করা সম্ভব, তা জানতে চান? খুব সহজ কয়েকটি উপায় আছে।
খুব চমকপ্রদ সংবাদ কেবল সোশাল মিডিয়ায় আটকে থাকবে না
টিভি, নিউজ পোর্টাল বা খবরের কাগজে কি সংবাদটির উল্লেখ আছে? আজকাল খবর নিয়ে সারাক্ষণ কাজ হচ্ছে। খুব বড়ো কোনও সংবাদ হলে সেটা স্রেফ হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা হয়ে আটকে থাকবে না। অনেক ফেক নিউজে আবার দাবি করা হয় যে কোনও মিডিয়া এই খবর দেখাবে না নিজস্ব স্বার্থের কথা ভেবে – একমাত্র তারাই সত্যের ধ্বজাধারী হয়ে তথ্য প্রকাশ্যে আনছে। এ সবে বিশ্বাস করার কোনও কারণ নেই। অন্তত দুই থেকে তিনটি সোর্স বিচার না করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না।
কোন ভাষায় খবর লেখা হয়েছে তা দেখুন
সংবাদমাধ্যমে খবর পরিবেশনের নিজস্ব রীতি হয়। খুব কাঁচা ভাষায়, যেমন-তেমনভাবে লেখা খবরের উপর আস্থা রাখবেন না। একবার ভালো করে পড়ে দেখুন। ব্যাকরণগত ত্রুটি, অপটু ভাষা, অগোছালো প্রকাশভঙ্গি – এমন নানা জায়গায় নজর আটকাবে। গুরুত্বপূর্ণ খবর পরিবেশনের আগে বারবার তার ফ্যাক্ট চেক করে যে কোনও সংবাদমাধ্যম, একেবারে হেলাফেলা করে লেখা সংবাদ প্রকাশ্যে আসবে না। ভিডিওর ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক দেখুন ভালো করে। সবচেয়ে ভালো হয় পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, প্রশাসনের সোশাল মিডিয়া পেজে গিয়ে খবরের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারলে।
খবরটি কোথা থেকে পাওয়া গেল, তার সূত্র দেওয়া আছে কী?
যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ খবর আসল হলে সেখানে সোর্স দেওয়া থাকবে, অন্তত দু’টি জায়গা থেকে সমর্থিত না হলে কোনও সংবাদের বিশ্বাসযোগ্যতা জন্মায় না। সেই সঙ্গে দেখে নিন তারিখ দেওয়া আছে কিনা। সাধারণত বড়ো, নামজাদা মিডিয়া হাউস মিথ্যে খবর ধরে ফেলে চটপট, তাদের নিজস্ব নেটওয়ার্কের জালে তা আটকা পড়ে যায়। ছোটো হাউস সব সময় কিন্তু এতটা সতর্ক হয়ে কাজ করতে পারে না।
সংবাদটি কি ছড়িয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে?
স্রেফ এই কারণেই সন্দেহ বাড়া উচিত। কোনও সংবাদমাধ্যম আপনার কাছে এ হেন আবদার করবে না। যে কোনও সংবেদনশীল খবর ছড়িয়ে দেওয়ার আগে তা যাচাই করে নেওয়ার দায় আপনার উপরেই বর্তায়, এ কথা খেয়াল রাখবেন অবশ্যই।
ইন্টারনেটে একবার সার্চ দিয়ে জানুন খবরটির সত্যতা আছে কিনা
নানা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা ভুয়ো খবরের সত্যতা যাচাইয়ের কাজ করে চলেছে অতন্দ্র প্রহরীর মতো। ইন্টারনেটে একবার সার্চ দিলেই তাদের বদান্যতায় জেনে যাবেন কোন খবর সত্যি, কোনটা মিথ্যে। কোনওরকম সন্দেহকে প্রশ্রয় না দিয়ে ইন্টারনেটের দ্বারস্থ হওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।