বাজি পোড়ানোর মরশুম শুরু হয় কালীপুজো-দীপাবলি থেকেই। ছটপুজো, বড়োদিন আর নববর্ষের রাতেও অবশ্য বাজি পোড়ে। এবার কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে।
. সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, উৎসব উপলক্ষ্যে জ্বালানো যাবে কেবল ‘সবুজ’ বা ‘গ্রিন’ তকমা দেওয়া বাজি। বাকি সব ধরনের বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ।
. সন্ধে থেকে আরম্ভ করে সারা রাতভর বাজি পোড়ানো আপনার স্বভাব? এবার কিন্তু অত স্বাধীনতা মিলবে না। কালীপুজো-দীপাবলিতে বাজি পোড়াবার সময় স্রেফ রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। ছটপুজোয় সকাল ৬টা থেকে ৮টা। বড়োদিন আর নতুন বছরের আগের রাতে ১১ টা বেজে ৫৫ মিনিট থেকে ১২.৩০টা পর্যন্ত কেবল বাজি পোড়াতে পারবেন।
তার আগে পরে জ্বালিয়ে নিয়ম ভাঙলে কী হতে পারে জানতে চান? এটা নির্ভর করবে স্থানীয় আইনরক্ষকদের উপর। আশপাশের কোনও পড়শি যদি বাজির শব্দে বা ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে থানায় আপনার নামে অভিযোগ জানান, তা হলে কিন্তু সমস্যায় পড়বেন।
. এবার প্রশ্ন, গ্রিন ক্র্যাকার বা সবুজ বাজি বস্তুটা কী?
সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে উটসব-অনুষ্ঠানে গ্রিন ক্র্যাকার বা সবুজ বাজি পোড়ানোর ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছিল এবং কোর্টের গাইডলাইন মেনেই কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ – ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল এঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (CSIR-NEERI) এই ধরনের বাজি প্রথম তৈরি করে। গ্রিন ক্র্যাকার তৈরির সময়ে কম ক্ষতিকর কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। তা থেকে যে ধোঁয়া বেরোয়, তা-ও পরিবেশের পক্ষে তেমন হানিকারক নয়।
. গ্রিন ক্র্যাকার তৈরির সময়ে আর্সেনিক, লিথিয়াম, বেরিয়াম, সীসার ব্যবহার হয় নামমাত্র। তা থেকে যে ধোঁয়া বেরোয়, তাতে ফুসফুস কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ সিংহভাগ জুড়ে থাকে জলীয় বাষ্প। সাধারণ বাজির থেকে সবুজ বাজিতে অন্তত ৩০ শতাংশ কম দূষণ হয়। তুবড়ি, ফুলঝুরি, রংমশাল এই টেকনিক মেনে তৈরি করা সম্ভব।
. কীভাবে বুঝবেন যে আপনার বাজি ‘সবুজ’ তকমাপ্রাপ্ত?
ভারতে গ্রিন ক্র্যাকার বিক্রি করতে গেলে CSIR-NEERI-র ছাপ থাকতেই হবে বাজিতে। সেটা আছে কিনা দেখে নিন – অনেক বিক্রেতাই স্টক ক্লিয়ার করার জন্য পুরোনো বাজিতে সবুজ ছাপ্পা মেরে বিক্রি করতে পারে – কেনার আগে সাবধান।
গ্রিন ক্র্যাকার কিন্তু সব ছোটোখাটো দোকানে পাবেন না। একটু খুঁজতে হবে এবং বেশি দাম দিতে হবে, কারণ এ দেশে খুব হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা এই ধরনের বাজি নির্মাণ করে। তার চেয়েও বড়ো কথা, এখনও পর্ষদ বা সরকারের তরফে এমন কোনও নির্দেশিকা নেই যা পড়ে স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে কোন কোন বাজি এই তালিকায় পড়বে।
এর পর যদি আদালত এবারের মতো বাজি পোড়ানো একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয়, তা হলে কিন্তু গ্রিন ক্র্যাকার পোড়ানোও বাতিল হতে পারে। তাই যদি এ সব চক্করে পড়তে না চান, তা হলে এবারের মতো বাজি পোড়ানো মুলতুবি রাখুন।