কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ফের কমতে আরম্ভ করেছে ধীরে ধীরে, অন্তত ২৪টি রাজ্যে সংক্রমণের গ্রাফ লাগাতার নিচের দিকে নামছে। পাশাপাশি চলছে ভ্যাকসিনেশনের কাজও, সামনের মাসে টিকার আকাল আরও কমবে এবং বেশি সংখ্যক মানুষ কোভিডের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি অর্জন করবেন।
সেই সঙ্গে বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকার থার্ড ওয়েভের মোকাবিলা করতেও প্রস্তুতি নিতে আরম্ভ করে দিয়েছে এখনই, তাদের মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। সেকেন্ড ওয়েভ যেমন হুড়মুড়িয়ে ঘাড়ে এসে পড়েছিল এবং প্রস্তুত হওয়ার সময়টুকুও মেলেনি, থার্ড ওয়েভে যেন তা না হয়, তারই ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যগুলি।
প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা আর সেফ হোমের বন্দোবস্ত মোটামুটি হয়ে গিয়েছে এ বারেই, তৃতীয় ওয়েভে যদি বহু শিশু আক্রান্ত হয় – কারণ করোনা ভাইরাস প্রতিবারই মিউটেশনের পর এমন একদলের উপর হানা দিচ্ছে যারা আগে আক্রান্ত হয়ে জোরালো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে ফেলতে পারেনি – তা হলে কী করা হবে, তার পরিকল্পনাও মোটামুটি সারা।
শিশুদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো সমস্যা হচ্ছে পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ড বা বেডের সংখ্যা সব রাজ্যেই কম। ছত্তিশগঢ়, গোয়া, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গের সরকার প্রাথমিকভাবে এই সমস্যার সমাধানে উঠে পড়ে লেগেছে। সরকারি-বেসরকারি সব স্তরের হাসপাতালেই শিশু চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। বাচ্চাদের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একজন অভিভাবকের থাকার বন্দোবস্ত করতে হয় – তাই তার জন্য কিছুটা সময় তো লাগবেই।
গড়ে তোলা হচ্ছে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট, নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, পিডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট। উত্তরাখণ্ডে DRDO-র তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠছে দু’টি হাসপাতাল, যেখানে কোভিড আক্রান্ত ষিশু ও তাদের মায়েদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। দিল্লি সরকার থার্ড ওয়েভ সামাল দেওয়ার জন্য শিশুচিকিৎসক, বিশেষজ্ঞ ও আইএএস অফিসারদের নিয়ে গড়ে তুলেছে বিশেষ টাস্ক ফোর্স।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার বাচ্চাদের চিকিৎসার জন্য গড়ে তুলছে নির্দিষ্ট ট্রিটমেন্ট প্রোটোকল। প্রচুর স্টেরয়েড আর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোভিড সারাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে এবং আরও নানা সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যাতে সে ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই কোভিডের চেনা লক্ষণগুলি টের পাওয়া যাচ্ছে না – ছ’ মাসের বাচ্চার স্বাদ-গন্ধ চলে গেলে সে বোঝাবেই বা কীভাবে? তাই কোনও ওষুধ প্রয়োগ করার আগে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে।
সেই সঙ্গে যাঁরা বাইরে বেরোচ্ছেন নানা কাজে, তাঁদের সকলকে টিকা নিয়ে নিতে বলা হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। তার ফলে সংক্রমণ বাড়িতে নিয়ে আসার আশঙ্কা কমবে। সেই সঙ্গে মাস্ক পরুন, বজায় রাখুন সামাজিক দূরত্ব।