এখনও বিশ্বের বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই বিশ্বাস করেন যে করোনা ভাইরাসের বাস ছিল বন্যপ্রাণির দেহে – মানুষের শরীরে তার প্রবেশ হয়েছে প্রাকৃতিক বিবর্তনের সূত্র মেনেই। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে খুব দ্রুত এগিয়েছে ঘটনাপ্রবাহ, এমন কিছু সূত্র উঠে এসেছে যা চাঞ্চল্যকর। বিশেষত আমেরিকায় সরকারি স্তরে এমন কিছু তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যা ভুরুতে ভাঁজ ফেলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, আমেরিকান সরকারের লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবেরেটরির একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ্যে এসেছে এবং সেখানে বলা হয়েছে, চিনের ল্যাবে গবেষণা চলার সময়েই কোনওভাবে বাইরে এসেছে করোনা ভাইরাস — এই তত্ত্বটি বিশ্বাসযোগ্য এবং এ নিয়ে গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। লরেন্স লিভারমোরের জেড ডিভিশনে এই রিসার্চের কাজ হয়েছিল এবং তারা যে আমেরিকান সরকারের ইন্টেলিজেন্স বিভাগের বকলমে কাজ করে, তা সবার জানা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আগাগোড়াই কোভিড সিচুয়েশনের জন্য চিনকে দায়ি করেছেন, আমেরিকার ইনফেকশাস ডিজিজ বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্টনি ফাউচিও উহানে একেবারে প্রথম যাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র প্রকাশ করার দাবি তুলছিলেন। ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সটির মধ্যেই জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাপ আছে, এমন একটা তত্ত্ব দানা বেঁধে উঠছে ক্রমশ। তবে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দাবি করেছেন, এখনও পাকাপাকি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি – তবে আরও তদন্ত যে হবে, তা নিশ্চিত।
WHO অবশ্য এখনও বলে চলেছে যে চিনের দিকে সরাসরি আঙুল তোলার মতো সাক্ষ্যপ্রমাণ তারা খুঁজে পায়নি এখনও। তবে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আরও এমন কিছু তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে, যা নিশ্চিতভাবে চিনের পক্ষে অস্বস্তিকর। কিছু বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ একযোগে ইন্টারনেটে তত্ত্বতল্লাশ চালিয়ে এমন কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন, যা চাঞ্চল্যকর।
কিছু পুরোনো নথি, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা টুকরো তথ্য ঘেঁটে যা জানা গিয়েছে, তা যে কোনও স্পাই থ্রিলারের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়! কীরকম? ২০১২ সালে চিনের ইউনান প্রদেশের এক পরিত্যক্ত খনিতে প্রবেশ করেছিল মাইনশ্যাফট বা যাতায়াতের রাস্তা পরিষ্কার করতে। সেখানে ততদিনে বাদুড় বাসা বেঁধেছে। বেরিয়ে আসার পর ছয় শ্রমিকেরই জ্বর আসে, দেখা দেয় নিউমোনিয়ার লক্ষণ। যাঁরা খনিতে বেশিদিন ছিলেন, তাঁদের সংক্রমণ তীব্র হয়। মারাও যান তিনজন।
উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির সঙ্গে যুক্ত ডা. শি জেনহি ও তাঁর টিম পরে সেই খনি থেকে বাদুড়ের মলের নমুনা সংগ্রহ করে আনেন, বলেন কোনও এক ছত্রাকের সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন শ্রমিকেরা। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই নমুনার মধ্যেই লুকিয়ে ছিল আজকের করোনা ভাইরাসের সূত্র। ‘দ্য সানডে টাইমস’-এর হাতে প্রমাণ আছে, ২০১৫-২০১৭ নাগাদ কিছু তথ্য ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছিল যাতে পরিষ্কার যে উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজিতে ‘গেন অফ ফাংশন’ শাখায় বাদুড়ের থেকে পাওয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলছিল।
জানা গিয়েছে, ২০১৩তে কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র ওই খনিশ্রমিকদের রহস্যময় অসুখ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন, উপসংহারে লিখেছিলেন, সার্সের মতো কোনও রোগেই তাঁরা আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং তা এসেছিল বাদুড় থেকেই। বহু আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ওই খনি পর্যন্ত পৌঁছতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছে ‘নিউজউইক’ পত্রিকা, কাউকে কাউকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
চিন এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, আমেরিকাও জানায়নি তারা ঠিক কী করতে চায় সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে।