কমতে থাকা কোভিড রোগীর সংখ্যা কোনওভাবেই স্বস্তিতে রাখছে না ভারত সরকারকে, কারণ দেশের নানা প্রান্তে মাত্রাছাড়া বেড়ে গিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ। তাতে মৃত্যুহারও অনেক বেশি। এমনিতেই ভারতের গরম, মাত্রাছাড়া আর্দ্রতার কারণে সারা পৃথিবীর অন্য সব দেশের তুলনায় এখানে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশি হয়। তার উপর ডায়াবেটিস ও শরীরে বাড়াবাড়িরকম জিঙ্ক আর নানা মিনারেলের উপস্থিতিতে নাকি বংশবিস্তার করছে ছত্রাক।
এক দল ডাক্তারের বক্তব্য হচ্ছে, ভারতে ডায়াবেটিসের সংখ্যা বরাবরই বেশি, এমনিতেও বহু রোগী অক্সিজেন সাপোর্টে থাকেন – তখন তো এইভাবে মিউকর ছত্রাকের সংক্রমণ হয় না, তা হলে এখন কেন হচ্ছে? এ নিয়ে আরও লেখাপড়া হওয়া দরকার। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR হয়তো খুব শিগগির এ নিয়ে গবেষণা শুরু করবে।
কোভিডের সময় যে অনেকেরই ডায়াবিটিস বেড়েছে ওষুধপত্রের প্রভাবে, এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক আর ওরাল স্টেরয়েডের ব্যবহারে শরীর দুর্বল হয়েছে, ফলে সংক্রমণ ডালপালা মেলেছে দ্রুত। যাঁরা জ্বর বা পেটখারাপ হলে পাড়ার দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে এনে টপাটপ খাচ্ছেন, তাঁরা আন্দাজও করতে পারছেন না যে শরীরের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোও মারা যাচ্ছে বেঘোরে।
বিদেশে কোভিডের চিকিৎসা হচ্ছে মূলত প্যারাসিটামল দিয়ে। এখানে একেবারে গোড়া থেকেই তার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ড্রাগ, স্টেরয়েড আর সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই – তাতেই কি অতিমারির পাশাপাশি মহামারি হিসেবে উঠে আসছে মিউকরমাইকোসিস?
বহু দশকের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, জিঙ্কের উপস্থিতিতে ছত্রাকের বাড়বৃদ্ধি চড়চড়িয়ে বাড়ে – বিশেষ করে মিউকর ছত্রাক যে বাড়েই তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আবার জিঙ্ক না থাকলে কমে যায় সংক্রমণ। ২০২০ সালে যখন কোভিড অতিমারি শুরু হল, তখন থেকেই মাত্রাছাড়া বেড়েছে ‘ইমিউনিটি বুস্টার’ হিসেবে জিঙ্ক খাওয়ার চল। গত বছর দেশের ‘হায়েস্ট সেলিং ড্রাগ’ ছিল জিঙ্ক। সেটাই কি মিউকরমাইকোসিস বাড়ার কারণ?
এর পাশাপাশি আরও একটা তত্ত্ব আছে, তা হল মেডিক্যাল অক্সিজেনের বদলে ইন্ডাস্ট্রিইয়াল অক্সিজেন দিয়ে রোগীর চিকিৎসা হয়েছে আপৎকালে – সেটাই কি ছত্রাক সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়াল? উত্তর মিলতে খানিকটা সময় লাগবে। আপাতত সাবধানে থাকুন। জ্বর এলে স্থানীয় ডাক্তার বা হেলপলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন, তাঁর পরামর্শমতো চলুন। সুস্থ থাকার জন্য কোনও ইমিউনিটি বুস্টার খাওয়ার দরকার নেই। সুষম খাবার আর খানিক ব্যায়ামের উপর আস্থা রাখুন, নিয়ন্ত্রণে রাখুন ব্লাড সুগার – তাতেই ভালো থাকবেন।