আপনি হয়তো ভাবছেন, প্রযুক্তির দুনিয়ায় কী হচ্ছে, সে বিষয়ে জেনে আমার কী হবে? না মশাই, গল্পটা অত সহজ নয় একেবারেই! দুনিয়া যেদিকে যাচ্ছে, তাতে ইচ্ছে থাক বা না থাক, টেকনোলজির সাম্প্রতিক খবরাখবর সম্পর্কে আপনাকে ওয়াকিবহাল থাকতেই হবে। কারণ করোনার দাপট পুরোপুরি না কমা পর্যন্ত বাজার তো আর বসে থাকবে না – প্রযুক্তির ঘাড়ে ভর দিয়ে দুনিয়া এগিয়ে যাবে তরতরিয়ে। আপনারও পিছিয়ে পড়ে থাকার কোনও কারণ নেই কিন্তু!
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও মেশিন লার্নিং
কম্পিউটার সিস্টেম যে প্রযুক্তির বলে মানুষের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সেটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই। এআই কীভাবে কাজ করে এখনও পরিষ্কার বুঝতে পারছেন না, তাই তো? ধরুন, আজকাল মেডিকাল ডায়াগনোসিস, আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া স্পিচ বা প্যাটার্ন চেনার মতো জটিল কাজগুলো এআইয়ের বলে বলিয়ান হয়ে কম্পিউটারই সেরে ফেলে – মানুষের মস্তিষ্ক যেভাবে চিন্তা করে, সেভাবেই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
এবার আসা যাক মেশিন লার্নিং প্রসঙ্গে। কম্পিউটারের যা যা করার কথা নয়, তা যদি সে শিখে নেয়, তা হলে সেটা পড়বে মেশিন লার্নিংয়ের আওতায়। এমনভাবেই প্রোগ্রাম সেট করা হবে, যাতে ডেটা দেখে কম্পিউটার প্যাটার্ন চিনতে পারবে, পৌঁছতে পারবে সিদ্ধান্তে। সাধারণভাবে, দু’ ধরনের শিক্ষা হয় – সুপারভাইজড ও আনসুপারভাইজড।
চাকরি: আগামী এক বছরের মধ্যে অন্তত ২০ মিলিয়ন চাকরি তৈরি হবে এই ক্ষেত্রে।
রোবোটিক প্রসেস অটোমেশন
মেশিন লার্নিং বা এআইয়ের মতো আরপিএ বা রোবোটিক প্রসেস অটোমেশনের সাহায্যে এমন বহু কাজ সহজেই করে ফেলা যাচ্ছে যা এতদিন কেবল মানুষই করতে পারত। আমরা প্রতিদিন এমন অনেক কাজ করি, যার ৪৫ শতাংশই মেশিন সেরে ফেলতে পারে। আর ভুলেও ভাববেন না যে আরপিএ কেবল একেবারে নিচুতলার কর্মীদের কাজটাই করে। সিইও, ফাইনানশিয়াল ম্যানেজার, ডাক্তাররা এমন অনেক কাজ করেন যা রিপিটেটিভ এবং মেশিন তা সঠিক প্রোগ্রামের সাহায্যে করে ফেলতে পারে। অ্যাপ্লিকেশন দেখা, ট্রানজাকশনের হিসেব মেলানো, মেলের উত্তর দেওয়ার মতো কাজ এই পদ্ধতিতে করা সম্ভব।
চাকরি: এই চাকরিতে কিন্তু প্রচুর টাকা মাইনে – গড়ে মেলে বাৎসরিক প্রায় ৭৬ হাজার ডলার!
ক্লাউড কম্পিউটিং
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে – কিছুদিন আগেও বোঝা যায়নি যে এত তাড়াতাড়ি ক্লাউড কম্পিউটিং মেনস্ট্রিম হয়ে উঠবে। আপাতত আমাজন ওয়েব সার্ভিস, গুগল ক্লাউড, মাইক্রোসফট আজুওর বাজার দখল করে রেখেছে। তবে বাজারের আকার রোজ বাড়ছে, বহু ব্যবসা পুরোপুরিভাবে ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম থেকেই হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরে এই বাজারের আকার আরও বাড়বে, প্রচুর চাকরির সুযোগও তৈরি হবে।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও অগমেন্টেড রিয়ালিটি
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহারকারীর জন্য বিশেষ এক ধরনের পরিবেশ তৈরি করে, অগমেন্টেড রিয়ালিটি সেই পরিবেশ আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। এখনও পর্যন্ত এর ব্যবহার হয় মূলত গেমিংয়ের ক্ষেত্রে। অগমেন্টেড রিয়ালিটির সেরা উদাহরণ হচ্ছে ‘পোকেমন গো’ গেম। তবে ধীরে ধীরে সিরিয়াস কাজের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বাড়ছে ভার্চুয়াল রিয়ালিটির। ‘ভার্চুয়ালশিপ’-এর সাহায্যে আমেরিকান নেভি, আর্মি, কোস্ট গার্ডদের ট্রেনিং দেওয়া চালু হয়েছে।
ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT)
স্রেফ ওয়াইফাই কানেকশন থাকলে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাড়ি, গাড়ি, নানা ডিভাইস একসঙ্গে জুড়ে নিতে পারবেন, সেই সঙ্গে পারবেন ডেটা আদান-প্রদান করতেও। একেই বলা হয় ইন্টারনেট অফ থিংস। প্রসঙ্গত, আমরা এখনও এর একেবারে প্রথম ধাপে আছি। আগামী দিনে এর ব্যবহার বাড়বে বিপুলভাবে, সেইমতো তৈরি হবে চাকরির সুযোগও।