আজকাল আকাশে মেঘ করলেই আতঙ্ক ছড়ায় – এই বুঝি বাজ পড়তে আরম্ভ করল! আশঙ্কাটা খুব ভুল, তাও বলা যায় না, কারণ বাজ পড়ার হার গত এক-দেড় বছরেই প্রায় ১০০ গুণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষত করে যাঁরা কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় থাকেন, তাঁরা হাড়ে-হাড়ে টের পান এ সত্য।
গত সপ্তাহে বাজ পড়ে বাংলার নানা জেলায় ২৭ জনের মৃত্যু হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের পরিবেশ দপ্তরও। এখন এমন কিছু প্রযুক্তি আছে যার সাহায্যে মেঘের মধ্যে কতবার বজ্রপাত হচ্ছে এবং মেঘ থেকে তা কীভাবে মাটিতে আসছে তা মেপে ফেলা যায় ঝড় আসার আগেই। সেই অনুযায়ী মানুষকে সাবধান করে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
একটা কথা মেনে নিতেই হবে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এখানে বছরের এই সময়টায় ঝড় ও বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হবেই। ঝাড়খণ্ডের দিকে মাটি খুব তেতে গিয়ে উপরে উঠে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হবে, তা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে বঙ্গোপসাগরের দিকে – পথে গোটা দক্ষিণবঙ্গে ঝড়বৃষ্টি হবে, এপ্রিল-জুন এটাই স্বাভাবিক। পুরো বর্ষা এসে গেলে আর এমনটা হবে না।
কলকাতা এই ‘স্কোয়াল লাইন’-এর কেন্দ্রে অবস্থিত, তার উপর এখানকার কংক্রিটের বাড়ি, কাচের জানলা আর প্রবল দূষণ বাজকে আকর্ষণ করে, তাই কলকাতায় একটু বেশিই বাজ পড়ে। সেটা তো আর বন্ধ করে দেওয়া যাবে না, তবে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যায়।
যখন দেখবেন বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হচ্ছে, তখন কোনও খোলা জায়গায় থাকবেন না। এবারেও যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের অনেকেই বাইরে ছিলেন। কেউ মাঠে চাষের কাজের তদারক করছিলেন, কেউ বৃষ্টিতে যাতে ঘরের চাল ভেদ করে জল না পড়ে, তাই ত্রিপল লাগাচ্ছিলেন। কেউ মাঠের মাঝেই পাম্পঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে দেশপ্রিয় পার্কের ক্রিকেট অনুশীলনরত এক তরুণ ক্রিকেটার বাজ পড়ে প্রাণ হারান।
আকাশে মেঘ জমতে দেখলেই নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে সরে যান। বৃষ্টি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। একান্ত আটকে পড়লে মাটিতে উপুড় হয়ে চুপ করে পড়ে থাকুন বাজ পড়ার সময়ে। তবে মাঠে জল থাকলে কিন্তু বিপদ আটকানো যাবে না, কারণ জল বিদ্যুৎবাহী – জলের উপর বাজ পড়লে তড়িদাহত হতে হবে। এমনকী বাড়িতে থাকাকালীনও জলের কাজ করবেন না – জলবাহী পাইপ, স্টিলের কল থেকেও শক খেতে পারেন।
গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়াটাও খুব বোকামি। কারণ গাছে পজিটিভ চার্জ থাকে, তা মেঘের নেগেটিভ চার্জকে আকর্ষণ করে। ফলে বাজ পড়া অনিবার্য। আশে-পাশে কোনও পাকা ছাউনি থাকলে আশ্রয় নিন। গাড়ির মধ্যে থাকলে চেষ্টা করুন কোনও ওভারব্রিজ বা গাড়িবারান্দার নিচে পার্ক করে দাঁড়াতে।
খোলা জানলার পাশে বা বারান্দায় যাবেন না এরকম দুর্যোগের সময়ে। মোবাইলে কথা বলবেন না, পারলে বন্ধ করে দিন। টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার, মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করবেন না, বন্ধ করে প্লাগ খুলে রেখে দিন। বাড়িতে বিদ্যুৎরোধী ব্যবস্থা রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।