মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছে, শেষ যে কবে গিয়ে হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না এখনই। বেশিরভাগ সেক্টরেই ছাঁটাই চলছে, দুদ্দাড়িয়ে পড়ছে জিডিপির হার, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার কৌশল হন্যে হয় খুঁজেও বিশেষ সুবিধে করে উঠতে পারছে না সরকার।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি নামক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, জুলাই মাস পর্যন্ত শহরাঞ্চলে কাজ হারিয়েছেন অন্তত ১১ মিলিয়ন বেতনভুক কর্মী, গ্রামের দিকে সংখ্যাটা অন্তত ৮ মিলিয়ন।
মনে হয়েছিল আনলক পর্ব শুরু হলে হয়তো খানিকটা স্থিতাবস্থা ফিরবে সংগঠিত ক্ষেত্রে, এখন সেই আশাও মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাতারাতি চলে যাচ্ছে আপাত-নিরাপদ ক্ষেত্রের কাজ, ধরানো হচ্ছে স্বেচ্ছাবসরের নোটিস।
আপাতত যা পরিস্থিতি, তাতে এমন আরও বেশ কিছুদিন চলবে। এই অবস্থায় ঠিক কী করা উচিত, তা ভেবে পাচ্ছেন না অনেকেই।
কী করবেন এখন
আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রথমেই মেনে নিন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আগেও এসেছে, তাতে কিন্তু সভ্যতার চাকা থেমে যায়নি, বরং মানুষ আবার ফিরে এসেছে পুরোনো রুটিনে। এই তো ২০০৮-২০০৯-এ অত বড়ো এক আর্থিক মন্দা দেখা দিল উন্নত বিশ্বে – তা থেকেও তো আমরা বেরিয়ে এলাম, নাকি?
করোনাও হার মানবে একদিন। তবে তার আগে নিজেকে সংহত রাখুন। ভেঙে পড়লেই যুদ্ধে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। তাই আপাতত জমানো টাকা দিয়েই খরচে চালিয়ে নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। মনের জোর চলে গেলে কিন্তু আপনি এখনই পিছিয়ে পড়বেন।
পজিটিভ চিন্তার সুফল
‘ফোর্বস’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট বলছে, যে কোনও সংস্থা যখন কর্মী নির্বাচনের কথা ভাবে, তখন তারা চাকরিপ্রার্থীর মানসিকতা আর অ্যাটিটিউড খুঁটিয়ে দেখে। বিপদের মুখে ভেঙে পড়েন যাঁরা, তাঁরা এই জায়গায় পিছিয়ে থেকেই শুরু করবেন।
প্রতিকূল অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কী কী করা উচিত সেই প্ল্যানিং করেন যাঁরা, তাঁরাই হয়ে ওঠেন নিয়োগকর্তাদের প্রথম পছন্দ। তাই পজিটিভ আর প্রো-অ্যাকটিভ হয়ে ওঠার কথা ভাবুন।
বুদ্ধিমানের মতো ভাবুন
বাজারের অবস্থা যখন খারাপ, তখন নতুন করে চাকরির সুযোগ তৈরি হয় না, এ কথা ঠিক। তেমনই আবার এ কথাও একইরকম ঠিক যে, যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই গুরুত্ব বাড়ে নির্দিষ্ট কিছু পরিষেবার।
যেমন ধরুন, অনলাইন এডুকেশন, হোম ডেলিভারি, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, স্বাস্থ্যের মতো কিছু কিছু ক্ষেত্রের বাজার এই অতিমারিতেও দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে বেড়েছে। আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, এমন কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা ভাবতে পারেন।
সামনের দিকে তাকান
অতীত নয়, ভাবুন ভবিষ্যৎ নিয়ে। আপনার সোশাল নেটওয়ার্কিং স্কিল কাজে লাগান যথাসম্ভব। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, নানা সাইট খতিয়ে দেখুন কোথাও কাজের কোনও সুযোগ তৈরি হচ্ছে কিনা। আপনি কী কি করতে পারেন না, তা নিয়ে না ভেবে নিজের জোরের জায়গাগুলো নিয়ে ভাবুন।
টাকাপয়সা সামলাবেন কীভাবে
আপাতত এসআইপি বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো বিনিয়োগের ক্ষেত্রগুলিকে স্থগিত করুন, কোনও বিনিয়োগের বিনিময়ে লোন নেওয়া সম্ভব হলে নিতে পারেন। চড়া সুদে ব্যক্তিগত লোন নেওয়া খুব বোকামি হবে, তার চেয়ে কাছের কোনও আত্মীয় বা বন্ধুর থেকে টাকা ধার নিতে পারেন একান্ত প্রয়োজনে।
খরচ ও বিলাসিতা একেবারে ছেঁটে ফেলুন। একান্ত প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রগুলির খরচ ছাড়া অন্য খাতে টাকা বরাদ্দ করা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখুন।
প্রাক্তন সংস্থা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করবেন না
এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি মনস্টার ডট কমের পরামর্শ হচ্ছে, যে পরিস্থিতিতেই চাকরি গিয়ে থাক না কেন, কখনও সোশাল মিডিয়া বা অন্য কোথাও প্রাক্তন কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কটু কথা বলবেন না। তাতে গায়ের জ্বালা হয়তো মেটে সাময়িকভাবে, তার চেয়ে বেশি কার্যসিদ্ধি হয় না।
আজকাল যে কোনও নিয়োগকর্তাই প্রার্থীর সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারবিধিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন। তা ছাড়া অতিমারি পরিস্থিতিতে ব্যবসার অবস্থা খারাপ হলে ছাঁটাই হতেই পারে, সেটা গায়ে লাগাবেন না।
ব্যবসার পরিকল্পনা আছে? পা ফেলুন বুঝে-শুনে
নিজের যথাসর্বস্ব কাজে লাগিয়ে ব্যবসার পরিকল্পনা করছেন? সাবধান। বাজারের অবস্থা টালমাটাল, কমেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও। এই অবস্থায় ব্যবসা দাঁড়াতেও কিন্তু সময় লাগবে। তাই খুব ভালো করে হোমওয়ার্ক করে, সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই নামুন। পকেট থেকে টাকা লগ্নি করলেও আগামী অন্তত মাস ছয়েক যাতে চলে যায়, সে ব্যবস্থা রাখবেন।
আয়ত্ত করুন কোনও নতুন স্কিল
এমন কিছু শিখতে পারেন যা পরবর্তীকালে আপনার কাজে লাগবে। আজকাল ঘরে বসে অনলাইনে অনেক কোর্স করা যায়। তবে হুট করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না, অন্যরা কিছু না কিছু শিখছে বলে আপনাকেও লেগে পড়তে হবে, তার কোনও মানে নেই কিন্তু!
দরকারে মনোবিদের পরামর্শ নিন
হাতে কাজ না থাকলে বা আগামীদিনে চরম অনিশ্চয়তার মুখোমুখি দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মনোবিদের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
না, এটা ভুলেও ভাববেন না যে কোনও বন্ধু বা পরিচিতের সঙ্গে কথা বললেই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব – তা হয় না। আপনাকে পেশাদারের শরণাপন্ন হতেই হবে। টাকা খরচ হলে হোক, মনের স্বাস্থ্য ভালো না হলে কোনও যুদ্ধেই জিততে পারবেন না।
যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁদের জন্য পরামর্শ
যে কোনও চাকরিপ্রার্থীরই কিছু সঞ্চয় থাকা উচিত, তাতে এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে সুবিধে হয়। সব সময়ে ছ’মাসের খরচ হাতে রেখে এগনো উচিত।
ফাইন্যানশিয়াল প্ল্যানার ও রিস্ক ম্যানেজমেন্ট এক্সপার্ট আশিস দাসের পরামর্শ হচ্ছে, “যে সংস্থায় আপনি চাকরি করছেন, তাঁদের মেডিক্লেম থাকলেও আপনার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিমা থাকা একান্ত জরুরি। তাতে আচমকা চাকরি না থাকলেও স্বাস্থ্যখাতের খরচ অন্তত সামতে পারবেন।”