কিছুদিন আগেও মনে করা হত অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করলে স্কুল-কলেজের মাস্টারি ছাড়া অন্য কোনও কাজ জুটবে না। তাই ক্রমশ জৌলুশ হারাচ্ছিল বিজ্ঞানের এই অন্যতম আদি শাখা, মোটা মাইনের চাকরির হাতছানিতে পেশাদার পড়ুয়ারা বেছে নিচ্ছিলেন ডেটা সায়েন্স, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, মেশিন লার্নিং, বিগ ডেটা, সাইবার সিকিউরিটির মতো প্রযুক্তি ক্ষেত্র।
কিন্তু ইদানীং আবার উলটপুরাণ দেখা দিয়েছে। উপরের সব ক’টি ক্ষেত্রেই ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের পাশাপাশি অঙ্ক বা স্ট্যাটিসটিক্স শাখার ছাত্রছাত্রীদের নিয়োগ করা হচ্ছে। বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে অঙ্ক জানা কর্মীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। একইভাবে ফাইনানশিয়াল সেক্টরেও তাঁদের নিয়োগ বাড়ছে।
কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রে যখন রিস্ক অ্যানালিসিস করা হয়, বা কোন ধরনের ব্যবসা আগামী দিনে চলতে পারে তার প্রোজেকশন তৈরি করা হয়, তখন অঙ্ক বিনা গতি নেই। প্রতি পদে প্রোব্যাবিলিটি, ফাংশনাল অ্যানালিসিস, টোপোলজি, অ্যালজেব্রিক থিওরি, নাম্বার থিওরি ধরে এগোতে হয় প্রতি পদে। তাই ফাইন্যান্স সেক্টরের রিসার্চ টিমে গণিতের গ্র্যাজুয়েটরা অগ্রাধিকার পান।
অঙ্ক বা স্ট্যাটিস্টিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স আর বিজনেস বা ডোমেইন সায়েন্সে দক্ষতা না থাকলে ডেটা সায়েন্স নিয়ে কাজ করাই যায় না। যে কোনও মডেলের পিছনে একটা অঙ্ক থাকে, আগে সেটা বুঝতে হয়। বিশেষ ধরনের পরিস্থিতিতে কেমন ফল হতে পারে, সেটা বোঝার পরেই সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করতে হয়। মেশিন লার্নিং মডেল নির্মাণের আগেও একেবারে বেসিকটা একইভাবে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।
সারা ভারতে যে সমস্ত প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঙ্ক শেখানো হয়, তার প্রতিটিতেই গত কয়েক বছরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আবেদনকারী ও নিয়োগকর্তার সংখ্যা। কয়েক বছর আগেও আইআইটির অঙ্ক বিভাগে টিমটিম করতেন হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রছাত্রী, সংখ্যাটা ক্রমশ বাড়ছে। গত দুই-তিন বছরে নানা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বহু ফ্রেশারের নিয়োগও হয়েছে। তার আগে কিন্তু অঙ্ক বা স্ট্যাটিসটিকসের পড়ুয়ারা অ্যাকাডেমিক্স বা রিসার্চের ক্ষেত্রেই আটকে থাকতেন।
বলা হয়, অঙ্ক ঠিকভাবে শিখলে মানুষের ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে, বাড়ে স্বচ্ছ চিন্তাভাবনার ক্ষমতা। কিন্তু সাধারণত আমাদের দেশে যেভাবে বাচ্চাদের অঙ্ক শেখানো হয়, তাতে বিষয়টির প্রতি বিতৃষ্ণা জাগে সহজে। প্রথমেই বুঝতে হবে, পরীক্ষায় পুরো নম্বর পাওয়ার সঙ্গে গণিতকে ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক নেই। সন্তানের সৃষ্টিশীলতা আর কল্পনা উসকে দিন অঙ্কের সাহায্যে, তার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলুন। তবেই অঙ্কের সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে পারে!