যুগ যে বদলাচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই! ইদানীং সেলেব্রিটিরা এমন সব বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন, যা দীর্ঘদিন ট্যাবু বলে পরিচিত ছিল। সব বাধা সরিয়ে মুখ খোলার সাহস সঞ্চয় করতে না পারলে কি আর ‘মি টু’র মতো আন্দোলন হত গোটা বিশ্ব জুড়ে?
এই তালিকায় নবতম সংযোজন মেগান মার্কেল। মেগান অবশ্য বিতর্কের কেন্দ্রে ছিলেন আগেও। কিছুদিন আগেই ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই বধূ স্বামীকে নিয়ে আলাদা হয়ে গিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি থেকে। ডাচেস অ্যান্ড ডিউক অফ সাসেক্সের সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন প্রিন্স হ্যারি ও আমেরিকান এই অভিনেত্রী – তাঁরা সন্তান আর্চিকে নিয়ে ভাগাভাগি করে থাকবেন আমেরিকা আর কানাডায়। ছুটিছাটায় ইংল্যান্ড যাবেন। সেই সঙ্গে নিজেরা উপার্জনের জন্য বেছে নেবেন কোনও না কোনও পেশা – আপাতত এমনটাই ঠিক আছে। প্রবল বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু মেগান কোনও কিছুকেই পাত্তা দেননি।
কয়েকদিন আগে তিনি ফের একটি বোমা ফাটিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা একটি ওপিনিয়ন পিসে বলেছেন, এ বছর জুলাই মাসেই তাঁর গর্ভপাত হয়েছে এবং তিনি ও তাঁর স্বামী এখনও সে বিপর্যয় পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
নিজেদের সমস্যা নিয়ে ভাবতে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, গর্ভপাত এমনই একটি সমস্যা যার মুখোমুখি হতে হয় অন্তত ১০-২০ শতাংশ নারীকে। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হয় না। সন্তান হারানোর শোক বুকে নিয়ে সারা জীবন গুমরে মরেন সেই মা, সমাজ তাঁর পাশে দাঁড়ায় না। পরিসংখ্যান বলছে, মিসক্যারেজের পর ২০ শতাংশ মহিলার ডিপ্রেশন হয়ে যায়। প্ল্যানড প্রেগন্যান্সিতে গর্ভপাত হলে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির পাল্লাও বেশি হয় – অনেক সময়ে পরবর্তী গর্ভাধানেও দেখা দেয় জটিলতা।
ডাক্তাররা বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোনও নির্ধারিত সময়ে যতজন নারীর গর্ভসঞ্চার হয়, তার ২০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্রূণের কোনও সমস্যা থাকে, তাই তা পূর্ণতা পায় না। কিন্তু কারণ যাই হোক না কেন, মায়ের মনে তা গভীর প্রভাব ফেলে। সে সময় পরিবারের সকলে মেয়েটির পাশে দাঁড়ালে সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়ানোটা সহজ হয়।
সেই সঙ্গে মেগান দৃষ্টিপাত করেছেন আরও একটি বিষয়ের দিকে। তাঁর স্বামী হ্যারিও একইভাবে ভেঙে পড়েছিলেন অনাগত সন্তানের অকালমৃত্যুতে। সন্তানশোক স্বামী আর স্ত্রী দু’জনকেই সমান পীড়া দেয়। পুরুষের কষ্টটাকে আমরা খতিয়ে দেখি না, তাঁরা প্রকাশ করেন না – কখনও কখনও তাঁদের পাশেও দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয়। সবচেয়ে বড়ো কথা, শোকের নারী-পুরুষ ভেদ হয় না। এই সহজ সত্যিটা আমরা কবে বুঝব?
ফোটো: ইনস্টাগ্রাম