আমাদের দেশে যৌনতা আর গর্ভনিরোধক, দুই নিয়েই নানা ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তার কারণ একটাই, সেক্স নিয়ে বিস্তর লুকোছাপা করা হয়। বাবা-মায়েরা একটা কথা বোঝেন না, কৈশোর থেকেই সন্তানের যৌন চেতনা বিকশিত হয় – তাই লুকোছাপা না করে গর্ভনিরোধকের প্রয়োজন সম্প্ররকে সবার সচেতন হওয়া উচিত। তাতে টিনএজ প্রেগন্যান্সির মতো ভয়াবহ সমস্যার হাত থেকে বাঁচা যায়।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের সাম্প্রতিক রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য – এদেশের পুরুষরাও গর্ভরোধ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করছেন আজকাল, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। গত পাঁচ বছরে ছেলেদের মধ্যে গর্ভনিরোধক ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে মেয়েদের ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল খাওয়া। নিশ্চিতভাবেই এটা আধুনিক চিন্তার প্রকাশ।
এবার ছোটো করে জেনে নেওয়া যাক, গর্ভনিরোধক বলতে ঠিক কী বোঝায়? অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক আর গর্ভাধানের মাঝের দেওয়ালটাই হচ্ছে কনট্রাসেপটিভ বা গর্ভনিরোধক। বাজারে নানা ধরনের গর্ভনিরোধক মেলে। তার মধ্যে ওরাল কনট্রাসেপটিভ পিল আর কন্ডোম আছে, আছে ইনট্রাইউটেরাইন ডিভাইস, ভ্যাজাইনাল রিং এবং হরমোনের ইঞ্জেকশন। কন্ডোমের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ লাগে না, কিন্তু অন্য প্রতিটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সঙ্গে একবার কথা বলে নিতে ভুলবেন না। কারণ প্রতিটিতেই নানা মাত্রায় হরমোন থাকে, কোনটা আপনার শরীরের পক্ষে সবচেয়ে নিরাপদ হবে তা জানা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়।
কন্ডোম গর্ভাধান ঠেকানোর পাশাপাশি আপনাকে সুরক্ষিত রাখে এসটিআই বা যৌন সংক্রমণ থেকেও। আজকের সমাজে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা কোনও সম্পর্কের বাঁধনে আটকা না পড়েও যৌনতা উপভোগ করতে পছন্দ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কন্ডোম ব্যবহার মাস্ট। সেই সঙ্গে মেয়েদের ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে গর্ভরোধক পিল খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়। তা হলে সন্তানধারণের আশঙ্কা আরও কমে যায়।
আর একটা কথা, কন্ডোম সম্পর্কে অজস্র ভুল ধারণা আছে, সেগুলির কবলে পড়বেন না। এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই যে একটির বদলে দুটি ব্যবহার করলে বেশি সুরক্ষা মিলবে। অনেকের ধারণা কন্ডোম যৌনসুখ উপভোগের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় – সেটাও মিথ্যে দুশ্চিন্তা। আজকাল অনেক উন্নতমানের প্রডাক্ট বেরিয়ে গিয়েছে বাজারে, তা আপনার উপভোগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
কন্ডোমে লুব্রিক্যান্ট দেওয়া থাকে এবং একটা সময়ের পর তা এক্সপায়ার করে যায়। তাই প্যাকেটের গায়ে লেখা এক্সপায়ারি ডেট দেখে তবেই ব্যবহার করুন। পেনিট্রেশনের আগেই কন্ডোম ব্যবহার করতে হবে – তাতে আপনি একদিকে যেমন যৌন রোগ থেকে সুরক্ষা পাবেন, তেমনই গর্ভাধানের আশঙ্কাও থাকবে না।