রোগভোগের খবর শুনতে কারওই আর ভালো লাগছে না – গত দু’ বছর যা চলছে, তাতে বিরক্তি আসাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যেই একটি খবর আশা জাগিয়েছে মনে – ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন বেরিয়েছে সম্প্রতি। তা ব্যবহারের মান্যতা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
চলতি সপ্তাহের বুধবারেই এই টিকা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রয়োগের নির্দেশিকা জারি করেছে হু। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখা যাক, ম্যালেরিয়া অতি প্রাচীন একটি মশাবাহিত রোগ যার কারণে প্রতি বছর বেশ কয়েক লক্ষ মানুষ মারা যান। সাহারা মরু অঞ্চলে এর প্রতাপ সবচেয়ে বেশি, অসখ্য শিশু এই রোগে প্রতি বছর প্রাণ হারায়।
গ্ল্যাক্সো স্মিথক্লাইন যে ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিনটি তৈরি করেছে, তা প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামকে ঠেকাতে বিশেষভাবে কার্যকর বলে জানা গিয়েছে। ফ্যালসিফেরাম নামক প্যাথোজেনের কারণেই ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া হয় এবং তার প্রাণঘাতী ক্ষমতা যে কতটা, সে সম্পর্কে একটা গোটা প্রজন্মের বাঙালির বিলক্ষণ অভিজ্ঞতা আছে। একটা সময়ে পুজোর আগে-পিছের কয়েকটা মাস জুড়ে আমাদের রাজ্যেও ম্যালেরিয়া দাপিয়ে বেড়াত। ম্যালেরিয়ার কারণে এ বাংলায় গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে গিয়েছে, এমন গল্প আমরা সবাই পড়েছি।
তবে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার যা প্রতাপ, তা বিশ্বের অন্যত্র চিন্তাও করা যায় না। বহু বছর ধরে ম্যালেরিয়ার প্যারাসাইটকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে, কিন্তু সাফল্য এতদিন অধরাই ছিল। বলা হয়, ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার চাইতে প্যারাসাইটের সঙ্গে লড়াই করা অনেক বেশি কঠিন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বিশ্বের প্রথম প্যারাসাইট-ঘাতী ভ্যাকসিন আবিষ্কার করেছেন – “নিঃসন্দেহে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের গর্বের শেষ নেই”, বলেছেন WHO প্রধান টেড্রস আদানউম গেব্রেসিয়াস।
আপাতত আফ্রিকার কয়েকটি দেশে ১৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সি শিশুদের এই টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। মোট চারটি ডোজ দেওয়া হবে ‘মসকিরিক্স’ নামক এই টিকার। দেখা গিয়েছে টিকার পাশাপাশি যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থা করলে ও রোগ হলে নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করলে মৃত্যুহার অনেকটাই কমানো সম্ভব হচ্ছে। কিনিয়া, ঘানা আর মালাউয়িতে বাচ্চাদের টিকাকরণের তালিকায় এই ভ্যাকসিনও জায়গা পেয়েছে।
প্যারাসাইট ঠেকাতে এই ভ্যাকসিন আগামীদিনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে সেটাই দেখার। সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও নয়া দিগন্ত উন্মোচিত হবে, কাবু হবে আরও অনেক রোগ।