বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর বনিবনা ছিল না মোটে। স্বামী উচ্চপদস্থ সেনা কর্মী, স্ত্রীও উচ্চশিক্ষিতা। স্বামীর মন তাঁর দিকে নেই বুঝতে পেরে স্ত্রী তাঁর উপর মানসিক চাপ তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন নানাজনের পরামর্শে। অফিসে, পরিবারের সকলের কাছে স্বামীর নামে নানা অভিযোগ জানাতে আরম্ভ করলেন।
অবস্থা একটা সময়ে এমন জায়গায় পৌঁছল যে স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে স্বামীর বিরুদ্ধে তাঁর অফিস এনকোয়ারির আয়োজন করল। দস্তুরমতো হেনস্থা হলেন তিনি। তবে যেহেতু বড়োমাপের কোনও দোষ বা অপরাধ খুঁজে পাওয়া গেল না, তাই রেহাইও পেলেন সসম্মানে।
এর পর তিনি পুরোপুরি বেঁকে বসলেন – কিছুতেই আর এই লাঞ্ছনাময় বৈবাহিক সম্পর্ক তিনি টেনে নিয়ে যাবেন না, তাঁর নিষ্কৃতি চাই বিয়ে থেকে। স্ত্রীরও ধনুকভাঙা পণ, তিনি স্বামীর সঙ্গেই থাকবেন, ডিভোর্স দেবেন না কিছুতেই – ওই ভদ্রলোকের সঙ্গেই তাঁকে সংসার করতে হবে। মামলা গড়ালো কোর্ট পর্যন্ত। এবার কী হবে, জিতবে কোন পক্ষ?
না, কোনও সিরিয়ালের প্লট নয় একেবারেই, দস্তুরমতো জীবনের পাতা থেকে তুলে আনা ঘটনা। বিশেষ করে আমাদের ভারতীয় সমাজে এমনটা প্রায়ই দেখা যায়। প্রেম বা সহমর্মিতা থাক বা না থাক, একে অন্যের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি অভিযোগ আনা হোক – সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হবে যে কোনও মূল্যে। কিন্তু কেন?
সম্প্রতি এ হেন এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিবাহবিচ্ছেদের আদেশ দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, দু’জন শিক্ষিত মানুষের বোঝা উচিত কখন সম্পর্কটা বিষিয়ে যাচ্ছে। মহিলা সংসার করতে ইচ্ছুক বলে অফিসে বা সামাজিকভাবে ভদ্রলোকের মানহানি করেছেন বার বার। এত হেনস্থার পর অন্য পক্ষ যদি সম্পর্ক টেনে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহ না পান, তা হলে তাঁকে কোনওভাবেই দোষী বলা যায় না।
এর আগে কিন্তু হাইকোর্টে উঠেছিল এই মামলা, সেখানে কোর্ট স্ত্রীর পক্ষেই রায়দান করেছিলেন। বক্তব্য ছিল এ দেশের বহু মধ্যবিত্ত পরিবারে এমনটা নিত্যদিন ঘটে। বেচাল স্বামী বা স্ত্রীকে হাতের মুঠোয় পুরে রাখার জন্য অন্যজন যেখানে পারে তার নামে অভিযোগ জানায়, ভয় দেখিয়ে মানসিক চাপ তৈরি করে।
এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য। বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রথা, এ কথা ঠিক। কিন্তু আত্মসম্মান রক্ষার অধিকারও সব মানুষের থাকা উচিত – এই রায়ে তা প্রমাণিত হল নতুন করে।
সম্পর্ক গড়ে ওঠে দু’জন মানুষের সহমতে। একজন অপরজনের উপর শারীরিক বা মানসিক কোনওরকম চাপ তৈরি করেই তা টিকিয়ে রাখতে পারে না, বিশেষ করে দাম্পত্য কলহ যদি অফিস পর্যন্ত পৌঁছয় এবং সহকর্মী বা ঊর্ধ্বতনের সামনে কারও মানহানি হয়, তা হলে সেটা ডিভোর্সের বৈধ কারণ বলে গণ্য হবে।