কড়াভাবে কোভিড বিধি মেনে চলা আর ভ্যাকসিনেশনের জোড়া ফলা দিয়ে কোভিডের প্রকোপ বেশ খানিকটা কমেছিল। দিন দশেক আগেই WHO-র চিফ সায়েন্টিস্ট ডা. সৌম্যা স্বামীনাথন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ভারতে অন্তত কোভিড হয়তো আর তেমন দাঁত-নখ বের করতে পারবে না – কিছু মানুষ আক্রান্ত হবেন, মাঝে মাঝে সংখ্যাটা বাড়বে, কিন্তু বিরাট বিপর্যয় হবে না।
কিন্তু এই আশার সঙ্গে ছিল একটি ফুটনোট – যদি না ডেল্টার মতো শক্তিশালী নতুন কোনও ভ্যারিয়ান্ট এসে হাজির না হয়। করোনা ভাইরাসের মিউটেশন হলে কিন্তু তা ফের ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে – ভ্যাকসিন যে সুরক্ষাবলয় তৈরি করেছে, তা ভেদ করাও বিচিত্র নয়।
সেই আশঙ্কা সত্যি করে মাথাচাড়া দিচ্ছে একটি নয়া স্ট্রেন – আপাতত সাউথ আফ্রিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে তার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়ান্টকে নিয়ে একটি প্রাথমিক গবেষণা হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ ফর কমিউনিকেবল ডিজিজ এবং কোয়াজুলু নাটাল রিসার্চ ইনোভেশন ও সিকোয়েনসিং প্ল্যাটফর্মে।
এ বছর জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় C.1 নামক একটি স্ট্রেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল, তার পর সেটি দমে যায় কিছুদিনের জন্য। তারই অভিযোজিত রূপ C.1.2, এই স্ট্রেনটির দেখা প্রথম মিলেছিল মে মাসে। কয়েকটি বিশেষ কারণে এটি সাম্প্রতিককালে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে, অনেকেই একে বিটা স্ট্রেন বলে অভিহিত করছেন – যদিও WHO এখনও মান্যতা দেয়নি।
C.1.2 কেন আলাদা?
. এই স্ট্রেনটি কোভিডের মূল ভাইরাস ও তার অন্য সব স্ট্রেনের চেয়ে আলাদা, অর্থাৎ এর মধ্যে মিউটেশনের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
. দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও চিন, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, সুইৎজারল্যান্ড, ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো ও মরিশাসে বিটা স্ট্রেনের উপস্থিতি দেখতে পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিশ্বের মোট ১২৩টি দেশে এই ভাইরাসের হদিশ মিলেছে, তবে এখনও পর্যন্ত তা ডেল্টা ভ্যারিয়ান্টের মতো প্রবল হয়ে ওঠেনি।
. বিটার স্পাইক প্রোটিনে পরিবর্তনটা এসেছে, অর্থাৎ বেড়েছে তার সংক্রমণ ক্ষমতা। এখন পৃথিবীতে যে ক’টি স্ট্রেন আছে, তাদের তুলনায় বিটা দ্বিগুণ ছোঁয়াচে।
. ভ্যাকসিনেশন বা আগের সংক্রমণের দরুন শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তাকে সহজেই হারিয়ে দিচ্ছে বিটা।
. বিটা থেকে যে রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে, তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছে WHO, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেশনের পরেও বিটা ভ্যারিয়ান্টে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করতে ও অক্সিজেন দিতে হয়েছে।
. এখনও পর্যন্ত ভারতে এই মিউটেটেড ভাইরাসের দেখা মেলেনি সেভাবে, তাই চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু সেই সঙ্গে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে চলার উপরেও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। ভিড় বা অসতর্কতা আপনার বিপদ বাড়াতে পারে। তাই সমস্ত আশঙ্কা শিকেয় তুলে রেখে বেড়াতে বা পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়বেন না। এখন সাবধানে না থাকলে কিন্তু মারণ তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়বে যে কোনও দিন।