কোভিডের থার্ড ওয়েভে শিশুরা আক্রান্ত হতে পারে, এমন একটা আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু তা শুরু হওয়ার আগেই গোটা দেশের অজস্র শিশু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুহারও বেশ বেশির দিকেই। শুরুটা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ দিয়ে, তার পর মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, কর্নাটক – সর্বত্র আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
পরিস্থিতি খারাপ এখানেও – উত্তরবঙ্গের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। গত এক সপ্তাহে সেখানে মারা গিয়েছে ১৪টি শিশু। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, মালদা মেডিক্যাল কলেজ, জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল, ইসলামপুর সুপারস্পেশ্যালিটি হাসপাতাল – সর্বত্র শিশুশয্যা উপচে পড়ছে ভিড়ে। কলকাতাসহ দক্ষিণবঙ্গের পরিস্থিতি এখনও ততটা সঙ্গীণ নয়, তবে জ্বরের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে।
কেন হচ্ছে এই সংক্রমণ? একদল ডাক্তার বলছেন, বছরের এই সময়টায় এমনিতেই নানা মশাবাহিত জ্বর আর ভাইরাল সংক্রমণে বাচ্চারা কাবু হয়ই। কোভিডের কারণে শিশুদের ভ্যাকসিনেশনের শেডিউলও ওলটপালট হয়ে গিয়েছে — পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জাও।
উত্তরপ্রদেশে অসুস্থ শিশুদের রক্তের নমুনায় জাপানিজ এনসেফেলাইটিস, স্ক্রাব টাইফাস, ডেঙ্গির নমুনা পাওয়া গিয়েছে। বাংলায় মিলেছে ফ্লু আর ভাইরাল ফিভারের হদিশ। তাই বাড়ির ছোটো বাচ্চাদের খুব সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা।
কী করবেন
. বড়োদের কারও জ্বর-সর্দি-কাশি হলে বাচ্চাদের কাছে যাবেন না। মাস্ক পরুন, আলাদা থাকুন, বার বার হাত ধুয়ে নিন।
. বাচ্চাদের মশারির মধ্যে রাখুন। পুরো হাতা জামা আর ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখতে পারলে ভালো হয়। বিশেষ করে সন্ধের পর।
. এখন বাইরে বেরোবেন না, ভিড়ের মাঝে যাবেন না। তাতে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে।
. খুব গরম, অতিরিক্ত স্যাঁতস্যাঁতানি, এসির ঠান্ডা – কোনওটাই বাচ্চার স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো নয়। তাকে শুকনো জায়গায় রাখুন। শিশুর ঘরে ভিজে কাপড় শুকনো করতে দেবেন না।
. বাচ্চার ডায়েরিয়া হলে তাকে বার বার জল খেতে দিতে হবে। ফলের রস বা পাতলা স্যুপও দেওয়া যায়। জ্বরের পাশাপাশি কাশি থাকলে, পেট খারাপ/ বমি হলে বা খিদে কমতে আরম্ভ করলে দেরি না করে ডাক্তারকে জানাতে হবে।
. বাচ্চার প্রস্রাবের দিকে নজর রাখুন। দিনে পাঁচবারের কম প্রস্রাব হওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়। সে চনমনে আছে কিনা বা খেলাধুলো করছে কিনা সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত।
. ভ্যাকসিনেশন যা যা বাকি আছে, করিয়ে নিন ঝটপট।
কী করবেন না
. তিনদিনের বেশি বাচ্চা জ্বরে ভুগলে ফেলে রাখবেন না, ডাক্তার দেখান।
. বাচ্চাকে বাইরের খাবার বা পানীয় দেবেন না।
. নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খাইয়ে কোনও এক্সপেরিমেন্ট করবেন না। ডাক্তারের কথামতো টেস্ট করান।