সবে স্কুল খুলেছিল গত মাসে, তাও ক্লাস করছিল কেবল ১০-১২ ক্লাসের সিনিয়র ছাত্রছাত্রীরা। তা সত্ত্বেও কেরলের মলপ্পুরম জেলার কাছাকাছি দু’টি স্কুলের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গেও ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হচ্ছে অনেক স্কুলে, ক্লাস টেন আর টুয়েলভকে ডাকা হচ্ছে প্রথমে, তার পর নবম আর একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসার কথা। যাদের অ্যানুয়াল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে, তাদের ক্লাস শুরু হবে। এই পরিস্থিতিতে এমন একটি ঘটনায় নিশ্চিতভাবেই তাল কাটছে।
জানা গিয়েছে, প্রথমে একটি ছাত্রের কোভিড ধরা পড়ে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ। তার পর কনট্যাক্ট ট্রেসিংয়ের প্রোটোকল মেনে সমস্ত ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ কর্মীদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করানো হয়। পার্শ্ববর্তী স্কুলটিও বিলম্ব না করে পরীক্ষা করায়, দেখা যায় যে রোগ ছড়িয়েছে সেখানেও। আক্রান্তদের পরিবার-পরিজনও যদি কোভিডের থাবা এড়াতে না পারেন, তা হলে সংখ্যাটা আরও বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত তা বুঝতে পারছেন না অনেক অভিভাবকই, তাঁদের নিশ্চিত করার মতো কোনও উত্তর সরকারের কাছেও নেই। কেরলে মাঝে মাঝে সংক্রমণের পকেট তৈরি হচ্ছে, অনেকেই বলছেন যে এই একটি স্কুলের উদাহরণ টেনে এনে বাকিদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
ভারতের বাকি সর্বত্রই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জীবনযাত্রা। সিনেমা হলে একশো শতাংশ অকুপেন্সির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চলছে রাজনৈতিক সমাবেশ, বিক্ষোভ আন্দোলন – সর্বত্র বিরাট জনসমাবেশ হচ্ছে। কোথাও থেকেই রোগ সেই অর্থে ছড়িয়ে পড়েনি – কোনওটিকেই কোভিড হটস্পট বলা যাবে না।
অভিভাবকদের আশঙ্কার মূল কারণ ইউরোপের কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ফ্রান্স আর ইংল্যান্ডের অভিজ্ঞতা। সেখানে স্কুল খোলার পরেই বেড়েছিল সংক্রমণের সংখ্যা। ফের সব বন্ধ করে দিতে হয়। সেটা ভয়ের কারণ হওয়ার পাশাপাশি সামনে এসেছে রোগ সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য। একদল বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নালে – তাতে জানা গিয়েছে যে শ্বেতাঙ্গদের শরীরে বিশেষ মিউটেশনের কারণে এএটি প্রোটিনের অভাব তৈরি হয়, তার ফলেই তাদের উপর প্রবল হামলা চালাচ্ছে করোনা ভাইরাস।
এই অবস্থায় সন্তানকে বাড়তি সাবধান হতে বলুন। হাত ধোয়া, যে কোনও সারফেস ছোঁওয়ার পর সেই হাত মাস্কে না লাগানো একান্ত দরকারি। রোজ স্কুলে না গেলেও চলবে, বিশেষ করে বাচ্চার শরীর ভালো না থাকলে তাকে স্কুলে পাঠাবেন না, কোয়ারেন্টাইনে রাখুন। প্রতিদিনের জামাকাপড় কেচে ফেলা দরকার। স্কুল থেকে ফেরার পর ভালো করে স্নান করা আবশ্যক। বাড়িতে বইখাতা নিয়ে পড়তে বসার সময়েও সাবধান, মুখে মাস্ক রাখতে হবে। পড়া শেষে ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
সবচেয়ে বড়ো কথা, রাতারাতি পুরো অফলাইন শিক্ষার দিকে ঠেলে দেবেন না সন্তানকে। তাকে সইয়ে নেওয়ার সময় দিতে হবে। আচমকা পরিবর্তনে মানসিক চাপে পড়ে যাবে কিশোর-কিশোরীরা। ভারসাম্য বজায় রাখুন, দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাটা একান্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।