একটা সময়ে মনে করা হত যে, কোভিডের চিকিৎসায় সেরে ওঠা রোগীর প্লাজমা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু হালের চিকিৎসাবিজ্ঞান তা একেবারেই নাকচ করে দেওয়া হচ্ছে, বরং প্লাজমা থেরাপি কিছু কিছু পেশেন্টের রোগ বাড়িয়ে দিতে পারে, এমনও আশঙ্কা থাকছে। কেন এই উলটপুরাণ?
প্রথমেই যেটা মেনে নিতে হবে, তা হল কোভিড একেবারেই নতুন রোগ, তা নিয়ে নানা গবেষণা চলছে। শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি। তবে তার মধ্যেই এটা বোঝা গিয়েছে যে প্লাজমা ব্যবহার করার পরেও অনেক রোগীর ক্ষেত্রেই কোভিডের অগ্রগতি কমছে না, ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যু বা সাইটোকাইন স্টর্ম।
কিছুদিন আগে পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও প্লাজমার ব্যবহার মান্যতা পেত। মাঝারি আক্রান্ত রোগীকে প্রথম সাতদিনের মধ্যে প্লাজমা দিলে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রোগের ভয়াবহতা – এমন একটা বিশ্বাস দানা বাঁধছিল। কিন্তু তার পর দেখা গিয়েছে যে, না বুঝেশুনে দেদার প্লাজমা ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে ব্যাহত হচ্ছে আক্রান্তের নিজস্ব ইমিউনোরেসপন্স। প্লাজমার কারণে শরীরের নিজস্ব অ্যান্টিবডি নিউট্রালাইজড হয়ে যাচ্ছে, এমনটাও দেখা গিয়েছে।
তার চেয়েও বড়ো আশঙ্কা হচ্ছে, যথেচ্ছ প্লাজমা ব্যবহারের ফলে মিউটেটেড ভাইরাসের জন্ম হতে পারে। একদল বিজ্ঞানী, গবেষক ও চিকিৎসক খুব চিন্তিত হয়ে আইসিএমআরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছিলেন কিছুদিন আগে। সরকারি, বেসরকারি ক্ষেত্রে যেভাবে চিন্তাভাবনা না করেই রোগের প্রকোপ ঠেকাতে প্লাজমার ব্যবহার শুরু হয়েছিল বিগত কিছুদিন ধরে, তাতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় ছিলেন তাঁরা। এমনিতেই ভারতীয় স্ট্রেনের দাপটে কাঁপছে সারা দুনিয়া, তার মধ্যে আরও মিউটেশন না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) টাস্ক ফোর্সের একটি মিটিংয়ে গত সপ্তাহেই প্লাজমা থেরাপি ব্যবহারের অসারতা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্ক কোভিড রোগীর চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই গাইডলাইন মেনেই এখন থেকে কোভিডের চিকিৎসা চলবে।
তাই যাঁরা রোগ থেকে সেরে উঠে প্লাজমা দানের পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরা আপাতত ক্ষান্ত দিন। এখনই তার প্রয়োজন নেই, নিজের শারীরিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিন বরং। সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য সেটাই সবচেয়ে দরকারি।