. কাকে বলে রেপো রেট? মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে কি তার কোনও সম্পর্ক আছে?
যে কোনও দেশের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক ব্যাঙ্ক (ভারতের ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া) যে হারে ছোটো ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়, তাকে বলে রেপো রেট। মুদ্রাস্ফীতি পরিস্থিতি তৈরি হলে রেপো রেট বাড়িয়ে দেয় সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক – তাতে ব্যাঙ্কগুলি ঋণ নেওয়ার হার কমায়।
তার ফলে বাজারে টাকার জোগান কমে, নিয়ন্ত্রণে থাকে মুদ্রাস্ফীতি। সম্প্রতি ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ৪০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে। অর্থনীতি যখন চাঙ্গা থাকে, তখন ছোটো ব্যাঙ্কের হাতে বাড়তি ফান্ড থাকে, সেগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে তারা আবার রিভার্স রেপো উপার্জন করতে পারে।
. রেপো রেট বাড়লে সাধারণ মানুষের পকেটে কি বাড়তি চাপ পড়বে?
হ্যাঁ, পড়বে। তার কারণ ব্যাঙ্ক আপনাকে ধার দিয়ে যে সুদ আদায় করছে, তার পরিমাণ বাড়াবে। উলটো দিকে, আপনি ব্যাঙ্কে যে টাকা জমা রেখেছেন, তার বিনিময়ে বেশি সুদ পাবেন – কারণ ব্যাঙ্ক নিজের হাতে টাকার জোগান বাড়াতে চাইবে। তবে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, অর্থনীতিতে এমন উপর-নীচ হতেই পারে – সারা দুনিয়াই এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এখন, ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়।
. কারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বেন?
মাঝারি ও ছোটো ব্যবসায়ী, যাঁরা গৃহঋণ নিয়েছেন বা নিতে চলেছেন, পারসোনাল লোন নিতে চান, তাঁদের পকেটের উপর বেশি চাপ পড়বে। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুদের হার বাড়বে, ইএমআই বেশি গুনতে হবে। যাঁরা ঋণ নিয়ে বাড়ি বা গাড়ি কেনার কথা ভাবছেন, তাঁরা কিছুদিন অপেক্ষা করুন। পারসোনাল লোন নেওয়াটাও ঠেকিয়ে রাখুন কিছুদিনের জন্য। যাঁরা ফ্লোটিং রেটে সুদ নিয়েছেন, তাঁদেরও বেশি টাকা শোধ দিতে হবে।
. ফিক্সড ডিপোজিট বা মিউচুয়াল ফান্ডের কী হবে?
বিনিয়োগকারীর উৎসাহ বাড়াতে ফিক্সড ডিপোজিটের রেট বেড়েছে – আগে যেখানে এক থেকে দেড় বছর জমা রাখা টাকার উপর সুদের হার ছিল ৫.২৫%, রেপো রেট বাড়ায় তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫.৭৫%-এ। সিনিয়ার সিটিজেনদের ক্ষেত্রে সুদের হার ৬.৫%। ব্যাঙ্ক ভেদে এর সামান্য হেরফের হতে পারে, তবে এখন ফিক্সড ডিপোজিটে টাকা রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
লার্জ ক্যাপ মিউচুয়াল ফান্ড ভালো রিটার্ন দেবে, কারণ বড়ো কোম্পানির লোনের বোঝা বাড়লেও তাদের খুব অসুবিধে হবে না। মিড বা স্মল ক্যাপ ফান্ডে সমস্যা হবে – কারণ মাঝারি বা ছোটো কোম্পানির ব্যবসা বাড়াতে লোনের প্রয়োজন পড়ে। এই অবস্থায় লোন পাওয়া মুশকিল, পেলেও বেশি টাকা সুদ দিতে হবে। অধিকাংশ ছোটো সংস্থা আপাতত কিছুদিন কোনওভাবে টিকে থাকার চেষ্টাই করবে – তাই এখন মিড বা স্মল ক্যাপে বিনিয়োগ করবেন না। সরকারি বন্ড, ডেট ফান্ডের বিনিয়োগও নিরাশ করবে। শেয়ার মার্কেট থেকেও বেশি রিটার্নের আশা নেই।
. তবে তাই বলে হাতে রাখা শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড বেচে দেবেন না – এখনই ঘাবড়ানোর কিছু নেই, ভারতীয় অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত। তাড়াহুড়ো না করে কিছুদিন মার্কেটের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা উচিত।