ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়ে মাঝে মাঝেই নতুন ঘোষণা হচ্ছে বলে আপনি কি একটু বিরক্ত ও বিব্রত হচ্ছেন? আসলে পুরো বিষয়টাই এত নতুন এবং পরীক্ষামূলক যে শেষ সিদ্ধান্ত নিতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে। সারাক্ষণ নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং তাতেই উঠে আসছে নতুন তথ্য – সেই অনুযায়ী বদলে যাচ্ছে নিয়মকানুন।
কিছুদিন হল একদল গবেষক বলতে আরম্ভ করেছেন যে, যে সমস্ত রোগী কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের (ভারতের ক্ষেত্রে এটির নাম ‘কোভিশিল্ড’) একটি ডোজই যথেষ্ট। তাতেই শরীরে যথাযথ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হবে। কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলা হচ্ছে?
কিছুদিন আগে হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালের ২৮০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দিয়ে তাঁদের উপরে সমীক্ষা চালানো হয়। এঁদের মধ্যে কিছুজন কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর টিকা নিয়েছেন, কিছুজন আবার আগে আক্রান্ত হননি – টিকা দেওয়ার পরেই তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া শুরু হয়েছে।
দেখা গিয়েছে যে টিকা দেওয়ার ২৮ দিনের মধ্যেই সবার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তবে যাঁরা আগে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরির হারও বেশি। পাশাপাশি তাঁদের টি আর বি সেল মেমোরিও অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
যাঁরা কোভিড থেকে সেরে ওঠার ৩ থেকে ৬ মাস পরে টিকা নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে রেসপন্সের হারও সব চাইতে ভালো। সেই কারণেই বলা হচ্ছে যে, যাঁদের একবার কোভিড হয়ে গিয়েছে, তাঁরা যদি রোগ থেকে সেরে ওঠার মাস তিনেক পর কোভিশিল্ডের একটি ডোজ নেন, তা হলেই সুরক্ষিত থাকবেন। বেঁচে যাওয়া ডোজ দিয়ে আরও অনেক বেশি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। বিদেশেও এ ধরনের পরীক্ষা হয়েছে এবং তাঁরাও এই নিয়ম মেনে চলার পক্ষপাতী।
পাশাপাশি এ কথাও খুব সত্যি যে, এ দেশে টিকার অভাব আর সেকেন্ড ওয়েভ – দুটো সমস্যা শুরুই হয়েছিল একসঙ্গে। বিশেষ করে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ কবে নেওয়া উচিত, তা নিয়ে গোড়া থেকেই নানা বিতর্ক হয়েছে। বার বার বদলেছে শেডিউল — তাই মানুষের মনে এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে টিকার আকাল চাপা দেওয়ার জন্যেই যেন-তেন প্রকারে সরকার ও স্বাস্থ্যমন্ত্রক নতুন নতুন বাহানা খুঁজে বের করছে।
এই বিশেষ সমীক্ষাটি যাঁরা চালিয়েছেন, তাঁরাও এ সত্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল – তাই তাঁরা ব্যাখ্যা করে কারণগুলি বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার পর যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের কী হবে? সে বিষয়ে কিন্তু কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই এখনও।